পাঁচগাছি যুদ্ধ (কুড়িগ্রাম সদর)
পাঁচগাছি যুদ্ধ (কুড়িগ্রাম সদর) সংঘটিত হয় নভেম্বর মাসের শেষদিকে। এতে ৯ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৭ জন অস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। কুড়িগ্রাম সদরে ধরলা নদীর লাগোয়া পূর্ব-দক্ষিণে পাঁচগাছির অবস্থান। রাজাকার কামান্ডার বয়েজ মণ্ডলের নেতৃত্বে গারুহারার নজরুল মওলানা, ছত্রপুরের ছকমত ব্যাপারী, মনছুর আলী, পাঁচগাছি মণ্ডল পাড়ার টেপু মণ্ডল, ছাদের মণ্ডল, গাটু, ছত্রপুরের পানাব্দি, সিতাইঝারের নজির হোসেন, পাঁচগাছি বাজারের গংগা প্রমুখ রাজাকার পাঁচগাছি বাজারে কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সঞ্জীব করঞ্জাই-এর কাঠের দোতলা গদি ঘরটি দখল করে ক্যাম্প স্থাপন করে। ক্যাম্পে কমান্ডার বয়েজ মণ্ডলের নেতৃত্বে রাজাকারদের ট্রেনিং দেয়া হতো। সৈয়দ মনসুর আলী টুংকুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের যাত্রাপুর অপারেশনের পর পাকসেনা ও রাজাকাররা পিছু হটে পাঁচগাছিতে শক্ত অবস্থান নেয় এবং আশপাশ এলাকায় হানা দিয়ে নানা অপকর্ম করতে থাকে। তাদের অবস্থান ও অপকর্মের খবর জানতে পেরে আব্দুল কুদ্দুস নান্নু কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচগাছি রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলীকে অপারেশন কমান্ডার করে যাত্রাপুর ধরলার পাড়ের গোলাম রব্বানী, কুড়িগ্রাম পুরাতন শহরের মুন্সী পাড়ার মো. নুরুজ্জামান, টগরাইহাটের আব্দুল জব্বার এবং দিনাজপুরের আব্দুল জলিল, ফজলুল হক, মকবুল প্রমুখকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নভেম্বর মাসের শেষদিকে সকালবেলা সোলায়মান আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচগাছি বাজারে সঞ্জীব করঞ্জাইয়ের গদিঘরের রাজাকার ক্যাম্পে অতর্কিত অক্রমণ করেন। রাজাকাররাও পাল্টা গুলি করলে উভয় পক্ষে যুদ্ধ হয়। ঘণ্টাখানেক স্থায়ী এ-যুদ্ধে রাজাকার কমান্ডার বয়েজ মণ্ডল, গাটু, নান্টু, নজির হোসেন, নছর কাজিসহ ৯ জন রাজাকার নিহত হয়। এরপর যুদ্ধের সম্ভাব্য পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ক্যাম্পের ভেতরে আটকে পড়া রাজাকার সদস্য ছাদের মণ্ডল, গংগা, টেপুসহ মোট ৭ জন অস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
পাঁচগাছির যুদ্ধে রাজাকার হত্যা ও আত্মসমর্পণের ঘটনা আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাজাকার বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক ভীতির সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তারা সম্ভাব্য পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে নিজেরাই মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। [এস এম আব্রাহাম লিংকন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড