পরিকোট বধ্যভূমি (লাঙ্গলকোট, কুমিল্লা)
পরিকোট বধ্যভূমি (লাঙ্গলকোট, কুমিল্লা) কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত লাঙ্গলকোট উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের বাঙ্গড্ডা বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পরিকোট নামক গ্রামে অবস্থিত। ১৪ই জুন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকোট গ্রামের ব্রিজ সংলগ্ন ভূঁইয়াপুকুর পাড়ে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে এবং ১১ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে অবস্থান করে।
এখানে অবস্থানকালে বিভিন্ন সময়ে তারা স্থানীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় আশপাশের এলাকাসহ চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, সেনবাগ ও নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকার বহু মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগ-এর কর্মী- সমর্থক ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে ব্রিজের নিচে ডাকাতিয়া নদীতে ফেলে দেয়।
পরিকোট বধ্যভূমিতে যাদের হত্যা করা হয়, তাদের সকলের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ১নং বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আবুল কালাম স্বাক্ষরিত একটি তালিকায় এ বধ্যভূমিতে নিহত ৩০ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- আলী মিয়া মজুমদার (পিতা আলী আজ্জম মজুমদার, রামেরবাগ), আলী আক্কাছ মজুমদার (পিতা আলী আজ্জম মজুমদার, রামেরবাগ), মুক্তিযোদ্ধা মো. মমতাজ উদ্দিন (পিতা যৌবন আলী, ছুফুয়া), মো. আবদুল গণি দারোগা (পিতা মো. আলাউদ্দিন, ছগরীপাড়া), মো. মোস্তফা কামাল (পিতা ফতেহ আলী), মো. হারুনুর রশিদ (পিতা ওসমান গণি, পদুয়া), লালমোহন বরজ (পিতা খিরতচন্দ্র বরজ, গান্দাছি), বঙ্গবিহারী বরজ (পিতা খিরতচন্দ্র বরজ, গান্দাছি), মো. আলী আকাব্বর (শ্যামপুর), জুন মিয়া খোন্দকার (পিতা মিন্নত আলী খোন্দকার, কাদবা দক্ষিণপাড়া), নাজির আলী (পিতা ছমির উদ্দিন, কাদবা দক্ষিণপাড়া), মো. তিতা মিয়া (পিতা চাঁন মিয়া, কাদবা দক্ষিণপাড়া), স্বপন মিয়া (পিতা আইয়ুব আলী, বাঙ্গড্ডা উত্তরপাড়া), লাল মিয়া (পিতা জব্বর আলী, বাঙ্গড্ডা উত্তরপাড়া), সিরাজুল ইসলাম (পিতা নোয়াব আলী, বেরী), আবদুর রহিম মজুমদার (পিতা লাল মিয়া মজুমদার, আঙ্গলখোঁড়), রোস্তম আলী (পরিকোট), হতার মা (গান্দাছি), আহম্মদের মা (গান্দাছি), জনা মিয়া (পিতা দুলা মিয়া, বাঙ্গড্ডা উত্তরপাড়া), জয়নাল আবেদীন (পিতা আলী আজ্জম, বাঙ্গড্ডা উত্তরপাড়া), ডা. আবদুল করিম (পিতা আহম্মদ উল্লা কাজী, দুর্গাপুর), মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক (পিতা মুন্সী ইউনুস, হেসাখাল), মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল মতিন (পিতা সেকান্তর আলী, বাহুড়া), মুক্তিযোদ্ধা ডা. কলিমুল্লা (পিতা মুন্সী আলী মিয়া, হেসাখাল), মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার রঙ্গু মিয়া (পিতা এয়াকুব আলী, আলিয়ারা), গৌরাঙ্গ সূত্রধর (চাউলভান্ডার), গৌরাঙ্গ সূত্রধরের ছোটভাই (চাউলভান্ডার), সাধন মজুমদার (বড় সাঙ্গিশ্বর) ও আবদুল খালেক মেম্বার (মনতলী)।
পরিকোট বধ্যভূমিতে যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, তাতে পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেয় ক্যাপ্টেন গাদ্দারজী, ক্যাপ্টেন জং, শরীফ মোহাম্মদ ও হানিফ খান। তাদের প্রধান সহযোগী ছিল মাওলানা মোস্তফা হামিদী (ছারজানিয়া) ও মাওলানা মনিরুজ্জামান (বাঙ্গড্ডা দক্ষিণপাড়া)। এছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর অন্য সহযোগীরা হলো- মাওলানা মহিনউদ্দিন (মৌকরা), ফুল মিয়া (বদরপুর), হাফেজ আহম্মেদ (বান্নগর), আবুল মিয়া (বাঙ্গড্ডা), মো. হাবীবুল্লা (বাঙ্গড্ডা), গাজী দেলোয়ার হোসেন (বাঙ্গড্ডা উত্তরপাড়া), গেদু মিয়া (বাঙ্গড্ডা উত্তরপাড়া), গুর্দা ঘোষ (বাঙ্গড্ডা উত্তরপাড়া), আবদুল করিম (গান্দাছি), ছোয়াব মিয়া চৌকিদার (গান্দাছি), নুরুল আমিন (গান্দাছি), রুহুল আমিন (চেউরিয়া পূর্বপাড়া), মমতাজ উদ্দিন (রামেরবাগ), মনির মিয়া (ছারজানিয়া) প্রমুখ।
২০০০ সালের ১৬ই ডিসেম্বর নাঙ্গলকোট উপজেলার তৎকালীন সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া পরিকোট বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণে একটি ফলক স্থাপন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিহতদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। [ইমন সালাউদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড