পলাশকান্দা যুদ্ধ (গৌরীপুর, ময়মনসিংহ)
পলাশকান্দা যুদ্ধ (গৌরীপুর, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ৩০শে নভেম্বর। এদিন পাকবাহিনী ও রাজাকারদের দ্বারা মুক্তিযোদ্ধারা আক্রান্ত হন। হানাদারদের আক্রমণের মুখে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলে ঘটনাস্থলে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৩ জন আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। হানাদাররা পরে তাঁদের হত্যা করে।
পলাশকান্দা গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ থানার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পলাশকান্দা গ্রামে অবস্থান গ্রহণ করে। মুজিব বাহিনীর এ দলের কমান্ডার ছিলেন মুজিবুর রহমান। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে পাকবাহিনীর রসদ ও সৈন্য বহনকারী যানবাহন ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত পাকিস্তানি ক্যাম্পে আক্রমণ করা। ৩ দিন ধরে এখানে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের খবর – রাজাকার – মজিদ মাস্টার পাকবাহিনীর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়। এ খবর পেয়ে পাকবাহিনী ও রাজাকারআলবদরদের একটি দল ৩০শে নভেম্বর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তুললেও পাকিস্তানিদের ভারী অস্ত্রের মুখে বেশি সময় টিকে থাকতে পারেননি।
এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন (পিতা মিয়াসর আলী, হাপানিয়া, পূর্বধলা, নেত্রকোণা; কাউরাট গ্রামে থেকে গৌরীপুরে অধ্যয়নরত ছিলেন) গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ এবং আনোয়ারুল ইসলাম মঞ্জু (পিতা আব্দুল মৌলা, সিনেমা হল রোড, গৌরীপুর পৌরসভা), এ কে এম সিরাজুল ইসলাম (পিতা মনফর উদ্দিন, বোকাইনগর, গৌরীপুর) ও মতিউর রহমান (পিতা আবদুস ছালাম, খৈরাটি, ঈশ্বরগঞ্জ) আহত অবস্থায় বন্দি হন। বন্দিদের পাকসেনারা ময়মনসিংহ ডাকবাংলোতে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। বেয়নেট খুঁচিয়ে চোখ উপরে ফেলা হয়। শেষে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে নদীতে তাঁদের লাশ ভাসিয়ে দেয়।
এ-যুদ্ধে তমিজ উদ্দিন, আনোয়ারুল হক খায়ের, আবদুল জলিল, গিয়াস উদ্দিন, এ কে এম নজরুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, নূরুল আমিনসহ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড