পদ্মপুকুর বধ্যভূমি (দুপচাঁচিয়া, বগুড়া)
পদ্মপুকুর বধ্যভূমি (দুপচাঁচিয়া, বগুড়া) বগুড়া জেলার অন্তর্গত দুপচাঁচিয়া উপজেলার দুপচাঁচিয়া-তালোড়া রাস্তার মাঝ পথে ভেলুরচক মোড়ে একটি নির্জন স্থানে অবস্থিত। ১০ই এপ্রিল সন্ধ্যায় পাকহানাদার বাহিনী দুপচাঁচিয়া সদরে প্রবেশ করে। রাতেই তারা দুপচাঁচিয়া থানা ও হাইস্কুলে Saved ক্যাম্প স্থাপন করে। ১১ই এপ্রিল সকালে তারা স্কুল সংলগ্ন কাঠের সেতু পার হয়ে প্রথমে হিন্দু কাপড় ব্যবসায়ী সতীশ চন্দ্র বসাককে হত্যা করে তাঁর দোকান, পাশের দোকান এবং আনোয়ার হোসেনের বাড়ি ও দোকানে আগুন লাগায়। এরপর বিভিন্ন সময় রাজাকার ও অবাঙালিদের সহযোগিতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন ও গণহত্যা চালাতে থাকে। পরে তারা থানা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে তালোড়া হাইস্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে।
স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় ক্যাম্পের পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে এক রাতে অজ্ঞাত ২ ব্যক্তিকে ধরে পদ্মপুকুর পারে এনে গুলি করে হত্যা করে। এরপর নিহতদের লাশ পুকুরের উত্তর-পূর্ব কোণে মাটি চাপা দেয়। সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অপর এক রাতে তারা ১২ জন লোককে ধরে এনে সারিবদ্ধ করে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এভাবে ১৪ জন লোক তাদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। হত্যাকাণ্ডের পর তারা আশপাশের গ্রামের লোকজনকে ডেকে তাদেরকে দিয়ে পুকুর পারে মাটি খুঁড়ে নিহতদের গণকবর দেয়। ভেলুরচক গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি (যাঁরা এখন বেঁচে নেই) মাটি খোঁড়ার কাজে ছিলেন। ওই রাতেই উপজেলার গুনাহার ইউনিয়নের কেউৎ গ্রামের একই পরিবারের চারজনকে পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে ধরে পদ্মপুকুর পারে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তাঁরা হলেন রবিয়া মণ্ডল (পিতা শরবদী মণ্ডল), মকবুল মণ্ডল (পিতা মরিয়া মণ্ডল), আবদুস সালাম (পিতা বরিয়া মণ্ডল), তছলিম উদ্দিন (পিতা তছির উদ্দিন)। নব্বইয়ের দশকে উপজেলা প্রশাসন ওই স্থানটি বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করে একটি স্তম্ভ নির্মাণ করেছে। প্রতিবছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে প্রশাসনের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ পদ্মপুকুর বধ্যভূমিতে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। [আনিছুল ইসলাম লিটন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড