You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.02.22 | অবশেষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : আইয়ুবের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত : দেশের সঙ্কটাবস্থা নিরসনে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
অবশেষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : আইয়ুবের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত :
দেশের সঙ্কটাবস্থা নিরসনে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব আজ জাতির উদ্দেশে এক বিশেষ বেতার ভাষণে ঘোষণা করেন যে আগামী নির্বাচনে আর তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হইবেন না। তাঁহার এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয় বলিয়া তিনি ঘোষণা করেন।
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন যে, প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠানের পথে যে সমস্ত অসুবিধা বিদ্যমান, তাহা দূরীকরণের জন্য তিনি চেষ্টা করিতেছেন। যাহাতে সমস্ত রাজনৈতিক দল ও নির্দলীয় নেতৃবৃন্দ উহাতে শরিক হইতে পারে। প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের এমন একটা ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা উচিৎ যাহাতে আমরা গণতন্ত্রের সর্বোত্তম ঐতিহ্য অনুসারে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করিতে পারি এবং আপনারা নিজেদের ইচ্ছা অনুসারে নূতন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করিতে পারেন।
তিনি জানান যে, যে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হোক না কেন, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে তাহার জন্য জাতীয় পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন হইবে। প্রেসিডেন্ট তাঁহার ভাষণে বলেন যে, জাতি আজ সঙ্কটজনক সময় অতিক্রম করিতেছে এবং আন্দোলন উন্মত্ততার রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে। প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিকেরই ইচ্ছা যে, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসুক এবং শান্তি ও সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক। প্রেসিডেন্ট বলেন, পাকিস্তান আমার প্রাণ এবং ইহার সেবায় আমি সারাটা জীবন উৎসর্গ করিয়াছি। সুতরাং ইহার নিরাপত্তা বিপন্ন এবং উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার মত কিছু হইতে দেখিলে আমি তাহা বরদাশত করিতে পারি না।
তিনি বলেন, আমি জানি যে, বর্তমান পরিস্থিতির সুরাহা করার জন্য আজ আমি যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করি না কেন, আমাদের ভবিষ্যতের উপর তাহার সুদূর প্রসারী প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হইবে। আমি আপনাদের যে রাজনৈতিক পদ্ধতি প্রদান করিয়াছিলাম, পাকিস্তানের স্থায়িত্ব এবং উহার জনগণের উন্নতি ছাড়া তাহার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। নিজেকে আজীবন ক্ষমতায় বহাল করার কোন বাসনা আমার মনে কোন সময় স্থান পায় নাই এপ্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমার ঘনিষ্ঠতম মহল জানেন যে, ১৯৬৫ সালের নির্বাচনের পর আমি তাহাদের কাছে ইহা পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করিয়াছিলাম যে, চলতি মেয়াদ সমাপ্ত হওয়ার পর আমি আর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হইব না এবং আগামী নির্বাচনের পর অন্য কাহাকেও প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণ করিতে হইবে।
বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতির বিরুদ্ধে দেশে যে অসন্তোষ বিরাজমান রহিয়াছে তৎসম্পর্কে আমি পরিপূর্ণভাবে জ্ঞাত রহিয়াছি। দেশবাসী চায় বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন। আমি আরো জানি যে, দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে আরো বেশী অধিকার চায়। আর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মনে করে যে, বর্তমান পদ্ধতিতে তাহারা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে সম অংশীদার নয় এবং নিজেদের প্রদেশের শাসন ব্যবস্থার উপর তাহাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নাই।
প্রেসিডেন্ট বলেন যে, দেশে এই মনোভাবও বিদ্যমান যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাহাদের যে সমস্ত ক্ষমতা থাকার দরকার, বর্তমান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদগুলির তাহা নাই।
প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, দেশের তরুণ সমাজ শিক্ষার বর্তমান পরিবেশে অসন্তুষ্ট এবং তাহারা চায় যে, তাহাদের অভাব অভিযোগসমূহ অবিলম্বে দূর করা হোক। প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাহাদের অসুবিধা ও অভাব- অভিযোযোগের প্রতিকার আমার দায়িত্ব। এই কারণেই আমি সমস্ত বিরোধী দল ও নির্দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আমার সহিত দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক সমস্যাসমূহ আলোচনার জন্য একটি সম্মেলনে আমন্ত্রণ করিয়াছি।
আমরা যদি নিজেদের দেশের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করিতে চাহি, তাহা হইলে আমাদের ভুলিলে চলিবে না যে, বর্তমান পরিস্থিতির একটা সমাধান খুঁজিয়া বাহির করার চেষ্টা করা প্রত্যেকরই জাতীয় কর্তব্য। কিন্তু কতিপয় অসুবিধার জন্য আমার প্রস্তাবিত সম্মেলনে এখনও বসিতে পারে নাই। সুতরাং উক্ত সম্মেলনে যাহাতে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল এবং নির্দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ শরিক হইতে পারেন সেজন্য আমি ঐ সমস্ত অসুবিধা দূর করার চেষ্টা করিতেছি।
প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তরুণ ছাত্রদের মৃত্যুতে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হইয়াছেন। ছাত্রদের উদ্দেশ করিয়া তিনি বলেন, ‘আমর প্রিয় ছেলেমেয়ারা, আপনার নিশ্চিত থাকুন যে, সর্বাধিক ত্বরিত গতিতে আপনাদের সমস্যা ও অসুবিধাসমূহ দূরীকরণের চেষ্টা করা হইতেছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরাইয়া আনার দায়িত্ব আপনাদের।
উপসংহারে প্রেসিডেন্ট জানান যে, খোদা না খাস্তা, বিরোধী দলের সহিত কোন কারণে মতৈক্যে উপনীতক হইতে না পারিলে তাহার জন্য সেমতাবস্থায় কেবলমাত্র একটা পথই খোলা থাকিবে। তাহা হইল—প্রস্তাবিত অসুবিধাসমূহ দূরীকরণের শাসনতান্ত্রিক প্রস্তাবসমূহ সরাসরি জনগণের সামনে পেশ করা। তবে শাসনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী এই সমস্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য জাতীয় পরিষদে পেশ করা হইবে। আগামী নির্বাচন যাহাতে পূর্বনির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হইতে পারে সেজন্য একাজ অবশ্য কালক্ষেপণ ব্যতিরেকেই করা হইবে বলিয়া তিনি আশ্বাস দেন। -এপিপি

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯