পয়সারহাট মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল (আগৈলঝাড়া, বরিশাল)
পয়সারহাট মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল (আগৈলঝাড়া, বরিশাল) মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ক্রমান্বয়ে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ ও উন্নত চিকিৎসার তেমন ব্যবস্থা ছিল না। স্থানীয়ভাবে গোপনে কিছু চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। তাছাড়া বর্ডারের সঙ্গে সংযোগ না থাকায় বরিশাল-ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের বাইরে নেয়ার সুযোগও ছিল না। চিকিৎসার অভাবে অনেক মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেন। এমতাবস্থায় হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন, বীর বিক্রম-এর প্রচেষ্টায় আগস্ট মাসে পয়সারহাটে প্রতিষ্ঠিত হয় পয়সারহাট মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল। এখানে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ছিলেন ডাক্তার যোগেশ্বর বিশ্বাস (বাগদা, আগৈলঝাড়া), ডাক্তার কেরামত আলী (ধানডোবা, গৌরনদী; পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার), ডা. বি কে রঞ্জিত (পয়সারহাট), ডাক্তার গফুর মিয়া (বাগদা), ডাক্তার শামসুদ্দিন বাহাদুর (পয়সারহাট), ডাক্তার ফিলিপস্ (খুলনা), ফার্মাসিস্ট আবদুল খালেক সিকদার (পয়সারহাট) ও শামসুদ্দিন বিশ্বাস (মধুর নাগরা), সমাজকর্মী আবদুল খালেক খান (পয়সারহাট), শহিদউল্লাহ তালুকদার (বাগদা), আবদুল খালেক বেপারী (পয়সারহাট), নবাব আলী চৌধুরী (বাগদা), আবুল কাশেম হাওলাদার, মধু মীর (নাঠৈ, গৌরনদী) ও মোজাম মিয়া (চান্দবাড়ি), ম্যাট্রন সুপ্রিয়া বিশ্বাস (বরিশাল সদর হাসপাতাল) ও মনা রানী ব্যানার্জী (পয়সারহাট) এবং সেবিকা মঞ্জু রানী রায় (রাজিহার) ও ডলি রানী বাড়ৈ। এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হলেন- ল্যান্স নায়েক কাঞ্চন সিকদার, হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম স্বয়ং, জাহাঙ্গীর হোসেন, হাশেম আলী, আলাউদ্দিন তালুকদার, সিরাজুল ইসলাম, মুজিবুল হক, আবদুস সাত্তার শাহ্, লিয়াকত শাহ্, আলিউজ্জামান, তাহের আলী গোলদার, মুহিবুল হক গোলদার, সেন্টু মীর প্রমুখ।
ডা. বি কে রঞ্জিত, তাঁর স্ত্রী মনা রানী ব্যানার্জী (পয়সারহাট, বাকাল) ও তাঁর বোন মঞ্জু রানী রায় (রাজিহার) এ হাসপাতালে চিকিসৎসা সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ম্যাট্রন সুপ্রিয়া বিশ্বাস সদর সরকারি হাসপাতাল থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ সরবরাহ করতেন। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে মনা রানী ব্যানার্জী দুবার হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন। এ হাসপাতালের পৃষ্ঠপোষকতায় হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন ক্যাপ্টেন ওমর আলী, ক্যাপ্টেন বাবুল, কমান্ডার আবদুল আজিজ, কমান্ডার আবদুল খালেক পাইক এবং মুজিব বাহিনী-র কমান্ডার আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা সেবায় পয়সারহাট মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতালটি একটি আদর্শ চিকিৎসালয়ে পরিণত হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে হাসপাতালটি ‘পয়সারহাট ইউনিয়ন হেলথ সেন্টার’ নামে সরকারি চিকিৎসালয়ে রূপ নেয়। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড