পটিয়া কলেজ বধ্যভূমি (চট্টগ্রাম)
পটিয়া কলেজ বধ্যভূমি (চট্টগ্রাম) কলেজের মূল ভবনের দক্ষিণ-পূর্বে বিজ্ঞান ভবনে অবস্থিত। তখন ভবনটি ছিল নির্মাণাধীন। কেবল প্রথম তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার এ বধ্যভূমিতে পাকবাহিনী অনেক নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে। তারা অনেক নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনাও ঘটায়। এখানে নির্যাতিত দুজনের মুখে সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন খরনা ইউনিয়নের কইস্যাপাড়ার আবুল কাশেম (পিতা ফজল আহমদ) ও মাস্টার মো. ইউছুপ (পিতা কবির আহমদ)। আবুল কাশেমের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মো. আবু তাহের ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার মেজর টি এম আলীর দলের সদস্য। সেপ্টম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এক রাতে তিনি সহযোদ্ধা তপন (সাতকানিয়া)-কে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন। এ খবর পেয়ে পাকসেনা ও মফিজুর রহমান (পিতা শফিউর রহমান, লালারখীল, খরনা)-এর নেতৃত্বে রাজাকার, আলবদর ও মুজাহিদরা তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলে। তবে আবু তাহের ও তপন পালাতে সক্ষম হন। তাঁদের না পেয়ে হানাদাররা আবু তাহেরদের বাড়িঘর লুণ্ঠনপূর্বক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং আবুল কাশেম ও তাঁর চাচাতো ভাই মাস্টার মো. ইউছুপকে ধরে বধ্যভূমির একটি নির্যাতন কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে আরো ৮ জন বন্দির সঙ্গে তাদের রাখা হয়। এই ৮ জন বন্দি তখন পাকসেনাদের নির্যাতনে ভয়ানকভাবে আহত। তাদের সামনেই শুরু হয় আবুল কাশেম ও মো. ইউছুপের ওপর অত্যাচার। কয়েকদিন পর উক্ত ৮ জন বন্দির ৪ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। চক্রশালার দুর্গাবাড়ির গৌতম নামে একজন ছিল তাদের পূর্বপরিচিত। এ হত্যাকাণ্ডের পর তাদের ওপর অত্যাচার- নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। ইউছুপের ওপর এত নির্যাতন চালানো হয় যে, তাঁর কণ্ঠস্বর বিকৃত হয়ে যায়। ৭-৮ দিন নির্যাতনের পর আবুল কাশেম ও ইউছুপকে মুক্তি দেয়া হয়। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড