পটিয়া গণহত্যা (চট্টগ্রাম)
পটিয়া গণহত্যা (চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ১৬ই এপ্রিল। এদিন পাকসেনারা চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার সদর থানার মোড় ও আশপাশের এলাকায় দুবার বিমান হামলা চালায়। প্রথমবার হামলা চালানো হয় সকাল সাড়ে এগারটার দিকে। তখন পটিয়ায় পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য করণীয় নির্ধারণকল্পে থানার মোড়স্থ ছমদিয়া বিল্ডিং-এর দোতলায় পটিয়া থানা ছাত্রলীগ- ও পটিয়া সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভা চলছিল। সভায় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের (পিতা ফজল আহমদ, খরনা), নাজিম (মোহাম্মদপুর), আবু তাহের খান খসরু (দোহাজারী), রতন কুমার নাথ (দোহাজারী) প্রমুখ। বিমান হামলার সঙ্গে-সঙ্গে সভা ভেঙ্গে যায়। দুটি বিমান থেকে গুলি ও বোমা বর্ষিত হচ্ছিল। আত্মরক্ষার্থে লোকজন এদিক- সেদিক ছোটাছুটি করছিল। কিছুক্ষণ পর হামলা বন্ধ হলে সকলে ভেবেছিল আর হয়ত হামলা হবে না। কিন্তু দুপুর পৌনে একটার দিকে দ্বিতীয়বার গুলি ও বোমা বর্ষণ করা হয়। সেদিন দুবারের বিমান হামলায় ২০ জন নিহত ও ৬০ জনের মতো আহত হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেকগুলো দোকানপাট, পিটিআই ভবন, আবদুস সোবহান রাহাত আলী হাইস্কুলের বারান্দা ও ছাদ, থানা ভবনসংলগ্ন মসজিদের বারান্দা, কয়েকটি লাইব্রেরি, বেশকিছু বাড়িঘর, হোমিও ডাক্তার ছৈয়দ আহমদের চেম্বার প্রভৃতি। ২০ জন শহীদের মধ্যে ১৩ জনের নাম জানা গেছে, তাঁরা হলেন- ছৈয়দ আহমদ (পিতা জোনাব আলী, হাইদগাঁও), আবদুল মালেক (পিতা আমিন শরীফ, পাইকপাড়া), আবুল খায়ের (পোস্ট অফিস আধুর বাড়ি), দানু মিয়া (কেলিশহর), দুধু মিয়া (পটিয়া), নছুমা খাতুন (স্বামী নজির আহমদ, পশ্চিম গোবিন্দারখীল), ফয়েজ আহমদ (পিতা বাচা মিয়া, গোবিন্দারখীল), আমির আহমদ (পিতা নাজির আলী, ইদুরমল্লাপাড়া), আমিনুল হক (পিতা নূরুল হক, আল্লাই কাগজী পাড়া), বিজয় দে (দক্ষিণ ভূর্ষি), উম্মর আলী (পিতা তুজুম্বল আলী, হাবিবুর পাড়া), ছৈয়দুল হক (পিতা মনির আহমদ, পশ্চিম গোবিন্দারখীল) এবং আলী আকবর (কাজীরপাড়া)। ডাক্তার ছৈয়দ আহমদ এবং দুজন রিকশাওয়ালা আবদুল মালেক ও দুধু মিয়াসহ ৫-৬ জন থানার মোড়েই নিহত হন। আমিনুল হক পটিয়া কলেজের পূর্ব গেটের বিপরীতে নিজের দোকানে পেটে স্প্লিন্টারবিদ্ধ হয়ে পরদিন সকাল ১০টায় আল্লাই কাগজী পাড়ায় নিজ বাড়িতে মারা যান। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড