পদ্মকান্দা যুদ্ধ (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ)
পদ্মকান্দা যুদ্ধ (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২৮শে অক্টোবর। এতে পাকসেনা ও রাজাকাররা পশ্চাদপসরণ করে এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। দিগনগর ইউনিয়ন মুকসুদপুর থানা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। পদ্মকান্দা দিগনগরের অন্তর্গত বর্তমান বরইতলা-মুকসুদপুর সংযোগ সড়কটি মুক্তিযুদ্ধের সময় কাঁচা ও ভাঙ্গা ছিল। তথাপি লোকজন এ পথেই পায়ে হেঁটে চলাচল করত। মুক্তিযোদ্ধারা মাঝে-মাঝে এ পথ দিয়ে এসে দিগনগর সেনাক্যাম্পে গুলি চালিয়ে চলে যেতেন। তাঁরা মাঝে-মধ্যে মিরেরডাঙ্গি ও বর্নি গ্রাম দিয়েও আসা-যাওয়া করতেন। তাই পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে এখানে আসত এবং গ্রামের লোকদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাত। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও রাজাকার ও পাকসেনাদের খোঁজে মাঝে-মাঝে এসব এলাকায় আসতেন। এমনি পরিস্থিতিতে ২৮শে অক্টোবর দুপক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ ঘটে। ঘটনাস্থল মিরেরডাঙ্গি ব্রিজের পশ্চিম পাশে পদ্মকান্দা মৌজায় রাস্তার দক্ষিণ পাশে। এ-যুদ্ধ পদ্মকান্দার যুদ্ধ নামে পরিচিত।
ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে দিগনগর ব্রিজ ক্যাম্প থেকে পাকসেনা ও রাজাকাররা পাকা রাস্তা পার হয়ে কাঁচা রাস্তার মুখে আসতে থাকে, আর মুক্তিযোদ্ধারাও পদ্মকান্দা রাস্তার মোড়ে চলে আসেন। এর পূর্বেই বর্নি গ্রামের মৌলভি হাবিবুর রহমান বাটিকামারী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পাকসেনা ও রাজাকারদের অত্যাচারের সংবাদ দিয়েছিলেন। তাই মুক্তিযোদ্ধারা তাদের, প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। চাওচা গ্রামের আ. ওয়াদুদ ভূঁইয়া, আইকদিয়ার মো. আলী মিয়া এবং লোহাইড়ের ইদ্রিস মোল্লা গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পাকসেনাদের প্রতিরোধ করার জন্য মিরেরডাঙ্গি পর্যন্ত অগ্রসর হন। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা হিরু মোল্লা ও জহিরের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ কহলদিয়ার পূর্ব পাশ দিয়ে বর্নি গ্রামের উত্তর মাথায় অবস্থান নেন। মিরেরডাঙ্গি থেকে মুক্তিযোদ্ধারা দিগনগর ব্রিজ থেকে আগত পাকসেনাদের লক্ষ করে গুলি ছুড়লে তারা পূর্বদিকে বরইতলা হয়ে মুকসুদপুর-বরইতলা রাস্তা দিয়ে পশ্চিম দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ করে এগিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের আসতে দেখে ২নং ব্রিজের পশ্চিম পাশে পদ্মকান্দা গ্রামকে পেছনে রেখে অবস্থান নেন। পাকসেনা ও রাজাকাররা মিরেরডাঙ্গি অতিক্রম করে ২নং ব্রিজের পূর্ব পাশে অবস্থান নেয়। তখন খুবই কাছাকাছি অবস্থান থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা নাজুক অবস্থায় পড়ে যান। এ-সময় উত্তর পার্শ্ব থেকে জহির এবং হিরু মোল্লার নেতৃত্বে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এতে পাকসেনারা চাপে পড়ে যায় এবং তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। পদ্মকান্দার এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। অপর একজনের হাতে গুলি লাগে। যুদ্ধে পাকসেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধা ওয়াদুদ, ফতেপুট্টির শাজাহান শেখ, আইকদিয়ার ইস্রাইল, ঢালিকান্দির সৈয়দ আলী, মজিবর, ভাজন্দির আবুল বশার ফকির, বনগ্রামের মজিবর রহমানসহ আরো অনেকে অংশগ্রহণ করেন। [মো. ফিরোজ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড