You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্থানীয় মুক্তিবাহিনী ন্যাভাল সিরাজ বাহিনী (নরসিংদী সদর)

ন্যাভাল সিরাজ বাহিনী (নরসিংদী সদর) নরসিংদী সদর উপজেলার একটি স্থানীয় মুক্তিবাহিনী। এর প্রতিষ্ঠাতা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, বীর প্রতীক- ওরফে ন্যাভাল সিরাজ।
মুক্তিযুদ্ধকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার- সারা দেশের রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে। এছাড়া মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম-এর নামে ‘এস’ ফোর্স, মেজর জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম-এর নামে ‘জেড’ ফোর্স এবং মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর নামে ‘কে’ ফোর্স গঠন করে তাঁদের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেক্টর কমান্ডারদের অধীনে সেনা, নৌ, বিমান, রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, এফএফ-, কমান্ডো ইত্যাদি বাহিনী গড়ে তোলা হয়। সরকারি এসব বাহিনীর বাইরে কোনো-কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে নিজস্ব বা দলীয় বাহিনীও গড়ে ওঠে। এসব বাহিনীর মধ্যে কাদেরিয়া বাহিনী – ও হেমায়েত বাহিনী – বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনি একটি বাহিনী হলো নরসিংদীর ন্যাভাল সিরাজ বাহিনী। নরসিংদীর চারটি থানা নিয়ে গঠিত ইউনিট কমান্ডার ন্যাভাল সিরাজ ও তাঁর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নরসিংদী সদর থানার সাব ইউনিট কমান্ডার মুহম্মদ ইমাম উদ্দিনের নেতৃত্বে এ বাহিনী গড়ে ওঠে৷
নরসিংদীর মুক্তিযুদ্ধে সিরাজ উদ্দিন আহমেদ অসীম সাহসিকতা, বীরত্ব ও বুদ্ধিমত্তার স্বাক্ষর রাখেন অতি ক্ষিপ্রগতি, দক্ষ ও কৌশলী সিরাজ উদ্দিন ছিলেন পাকবাহিনীর ত্রাস। তাঁর নাম শুনলেই পাকবাহিনী আঁতকে উঠত। আগস্টের মধ্যেই নরসিংদী, ও পলাশ ঘোড়াশাল এলাকায় পাঁচদোনার বাহিনী প্রধান যুদ্ধ ও জিনারদীর যুদ্ধ সহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধ ও অপারেশন তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়। ফলে পাকবাহিনীর নিকট তিনি এক বিভীষিকা হয়ে দেখা দেন। নরসিংদীর প্রথম প্রতিরোধ বাগবাড়ী-পাঁচদোনা যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে ইপিআর-বেঙ্গল রেজিমেন্টের ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে স্থানীয় ডাকাত দল যখন জনগণের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করছিল, তখন মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন, আ. হাকিম ও ছালামসহ কয়েকজন যুবককে নিয়ে ডাকাত নিধন ও অস্ত্র উদ্ধার করে এলাকায় শান্তি স্থাপন করে তিনি একজন বিচক্ষণ ও সাহসী ব্যক্তি হিসেবে এলাকার জনগণের শ্রদ্ধা অর্জনে সক্ষম হন।
২৫শে মার্চ পাকবাহিনীর নারকীয় গণহত্যার পর থেকেই শুরু হয় সিরাজ উদ্দিনের কর্মকাণ্ড। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের নির্দেশনা অনুযায়ী ইমাম উদ্দিনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে বাঁশের লাঠি দিয়ে নেহাব স্কুল মাঠে সামরিক মহড়া শুরু করেন। ৪ঠা ও ৫ই এপ্রিল নরসিংদী শহরে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর বোমা হামলার পর ৯ ও ১০ই এপ্রিল বাগবাড়ি-পাঁচদোনায় সংঘটিত প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধে বিদ্রোহী বাঙালি ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের সঙ্গে সিরাজ উদ্দিন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নরসিংদীর প্রতিরোধযুদ্ধের পর নেহাব স্কুল মাঠে শুরু করা তাঁর ট্রেনিং কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়। অন্যদিকে ইপিআরদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার অভিযান এবং জনগণকে সংগঠিত করার কাজও একই সঙ্গে চলতে থাকে। এপ্রিল মাসের শেষদিকে সিরাজ উদ্দিন চলে যান ভারতে। সেখানে মতিনগর ক্যাম্পে মেজর খালেদ মোশাররফ ও মেজর হায়দারের সঙ্গে আলোচনা করে ২-৩ দিন পর তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। এসেই তিনি শুধু এক্সপ্লোসিভ ট্রেনিং গ্রহণের জন্য মুহম্মদ ইমাম উদ্দিনের নেতৃত্বে ন্যূনতম এসএসসি পাসকরাদের নিয়ে গঠিত একটি দল মতিনগর ক্যাম্পে পাঠান। প্রায় দুমাস অতিবাহিত হওয়ার পরও দলটি ফেরত না আসায় তিনি পুনরায় ভারতে যান। ২ নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার্স মতিনগর ক্যাম্প তখন মেলাঘয়ে স্থানান্তরিত। সেখানে শিবপুর, নরসিংদী, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত ১নং ইউনিটের কমান্ডারের দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পণ করে চারটি থানার জন্য চারজন সাব ইউনিট কমান্ডারসহ তাঁকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। নরসিংদী থানার সাব-ইউনিট কমান্ডার মুহম্মদ ইমাম উদ্দিনকে তাঁর নিজ দায়িত্বসহ ১নং ইউনিটের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নিযুক্ত করে যাবতীয় দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত করে সিরাজ উদ্দিন পুরো ইউনিট নিয়ে এলাকায় পূর্ণোদ্যমে কর্মতৎপরতা শুরু করেন।
………..
সারাদেশে ন্যাপের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক তথা স্বাধিকার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে কাজ করতেন। স্বাধীনতা লাভের পর ভাসানীপন্থী অংশটি বহুধাবিভক্ত হয়ে বিলীন হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে তারা সামরিক শাসকদের দ্বারা সৃষ্ট দলে শামিল হয়ে ক্ষমতার ভাগীদার হয়। আর মস্কোপন্থী অংশটি বহুদিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে এর কর্মকাণ্ড সীমিত।
মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপের উভয় অংশই অংশগ্রহণ করে। মস্কোপন্থী অংশটি মুক্তিযুদ্ধের মূল ধারায় যুক্ত হয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। পিকিংপন্থী অংশটি বিচ্ছিন্ন অবস্থান তৈরি এবং আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বিকল্প বামধারা সৃষ্টি করতে উদ্যোগী হয়। পাকিস্তানের গোটা কালপর্বে সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাঙালির স্বতন্ত্র জাতিসত্তা, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলছিল, বিশেষ করে ষাটের দশকে। এ-সময় ন্যাপ ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ছাত্র, যুবক, মহিলা, শ্রমিক, কৃষক প্রভৃতি গণসংগঠন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলে স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষা আন্দোলন, বাঙালি সংস্কৃতিকে পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন থেকে রক্ষা, কৃষক-শ্রমিকের আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়া, গণতন্ত্ৰ প্ৰতিষ্ঠা, স্বায়ত্তশাসন অর্জন প্রভৃতি প্রশ্নে ন্যাপ ছিল আপসহীন। ১৯৬৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব-বিরোধী সংগ্রাম শুরু হলে ন্যাপসহ আটটি রাজনৈতিক দল মিলে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক) গঠন করে। সে-সময় ছাত্র সংগঠনগুলো মিলে গঠন করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, যারা ১১-দফা দাবিনামা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছাত্র-গণআন্দোলনকে বেগবান করে তোলে। ন্যাপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন- সেই সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং কার্যকর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে। সংগ্রাম তীব্র আকার ধারণ করলে আইয়ুব খানের পতন ঘটে। নতুন সামরিক শাসকের অধীনে ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোজাফ্ফর ন্যাপ মাত্র একটি আসন লাভ করে। ভাসানী ন্যাপ ‘ভোটের আগে ভাত চাই’ বলে নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে কেন্দ্র ও প্রদেশে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, যা স্বাধীনতার লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু করার ভিত্তিভূমি রচনা করে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থবাদী মহল নির্বাচনি ফলাফল মেনে না নিয়ে তাদের শাসন-শোষণ অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্র শুরু করে। ফলে বাংলাদেশের জনগণের সামনে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সংগ্রাম শুরু করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। জনগণের চেতনাকে জাগ্রত ও পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে ন্যাপও রাজপথের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন- শুরু হলে ন্যাপের উদ্যোগে জনসভা, পথসভা, মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি সংঘটিত হতে থাকে। ঢাকার বাইরে জেলা-থানা পর্যায়েও গণজমায়েতের কাজ চলতে থাকে। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণার পর গোটা বাঙালি জাতি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। সারা দেশ জুড়ে চলতে থাকে সংগ্রামের প্রস্তুতি। ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে ঢাকা শহরের পাড়া-মহল্লাসহ সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে ওঠে। এ বাহিনী জনগণকে রাজপথের সংগ্রামে শামিল করার পাশাপাশি সশস্ত্র সংগ্রামের মহড়া দেয়ার কাজও অব্যাহত রাখে।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিলে ন্যাপের কর্মীরা প্রথমদিকে অন্যান্য দলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়। গাছ কেটে রাস্তা বন্ধ করে যে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় তা সুসজ্জিত হানাদার বাহিনীর মারণাস্ত্রের সামনে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। পাকিস্তানিরা তখন রক্তের হোলিখেলায় মেতে ওঠে। তারা নির্বিচারে প্রথমে ঢাকা শহরে মানুষ হত্যা করে। একই ঘটনা ঘটতে থাকে ঢাকার বাইরে, সারা বাংলাদেশে। ফলে সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া বাঙালির সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকে না। ন্যাপের নেতা-কর্মীরা প্রথমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরে ভারতে আশ্রয় নিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়।
ভারতের আগরতলা, মেঘালয়, বিশেষ করে কলকাতায় ন্যাপের কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে জেলাভিত্তিক অভ্যর্থনা ক্যাম্প গড়ে তোলে। ঐসব ক্যাম্প থেকে কেন্দ্রীয় অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে গঠিত মুক্তি বাহিনীতে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ১২ হাজার সদস্য ছিল। তাছাড়া ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক গঠিত আলাদা গেরিলা বাহিনীর ৫ হাজার কর্মীও প্রশিক্ষণ নেয়। তারা দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। জনগণকে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দান, মানুষকে সংগঠিত করা প্রভৃতি কাজের পাশাপাশি তারা মুক্তাঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়।
শুরু থেকেই ন্যাপ ও সমমনা রাজনৈতিক দল ও সংগঠন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। বিশ্ব শান্তি পরিষদ, আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদ, ছাত্র-যুবা- নারী সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচারকার্য পরিচালনা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড নয় বরং জনগণের জাতীয় মুক্তি তথা স্বাধীনতার সংগ্রাম, ন্যাপসহ বামপন্থী মহল এই বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়। এ ব্যাপারে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও অন্যান্য বামপন্থী দল বিশেষ সহায়তা প্রদান করে। বিশ্বসমাজতান্ত্রিক শিবিরে এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে, বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ স্বাধীনতার লক্ষ্যেই সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করছে। বিশ্বজনমত গঠন করার লক্ষ্যে ন্যাপনেতা দেওয়ান মাহবুব আলী বুদাপেস্ট শান্তি সম্মেলন শেষে মস্কো হয়ে ফেরার পথে দিল্লি বিমান বন্দরে ১৯৭১-এর মে মাসে মৃত্যুবরণ করেন। ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রচার কার্যে অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ন্যাপসহ বামপন্থীদের প্রচার কার্যের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক শিবির, জোটনিরপেক্ষ দেশ ও গণতান্ত্রিক মহলের জন্য আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ সহজতর হয়।
ন্যাপের প্রচারাভিযানের অন্যতম হাতিয়ার ছিল সাপ্তাহিক নতুন বাংলা, যা মুক্তিযুদ্ধকালে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প, শরণার্থী শিবির- ও দেশের মধ্যে বহুল পঠিত একটি যুদ্ধ- প্রচারপত্র হিসেবে সমাদৃত হয়। নতুন বাংলা-র প্রকাশনা স্বাধীনতার পরেও অব্যাহত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য ন্যাপ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে। শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও মওলানা ভাসানীপন্থী ন্যাপের সমন্বয়ে সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি (Consultative Committee) গঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার মধ্যে এই কমিটি গঠন বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। যদিও Consultative Committee মাত্র কয়েকটি বৈঠক করে, কিন্তু দেশে-বিদেশে এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি (আগস্ট ১৯৭১), যা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ত্বরান্বিত করেছিল,৷ তাতেও ন্যাপ ও বামপন্থীদের বিশেষ ভূমিকা ছিল।
ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লার বেতিয়ারা নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। বিশ্ব জনমত গঠন, ন মুক্তিযুদ্ধের প্রচার অভিযান এবং সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি অসামান্য অবদান রাখে। [মোনায়েম সরকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!