নেত্রকোনা শহর যুদ্ধ (নেত্রকোনা সদর উপজেলা)
নেত্রকোনা শহর যুদ্ধ (নেত্রকোনা সদর উপজেলা) সংঘটিত হয় ৮ই ডিসেম্বর রাতে। এতে বহু পাকসেনা হতাহত হয়। এ-যুদ্ধের পরিণতিতে নেত্রকোনা শহর হানাদারমুক্ত হয়। এখানে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
৭ই ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্বধলা ও দুর্গাপুর ব্যতীত নেত্রকোনার সকল থানা এবং সুনামগঞ্জ অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দলগুলো নেত্রকোনা শহরে সমবেত হয়। ৮ই ডিসেম্বর নেত্রকোনা শহরকে হানাদারমুক্ত করার জন্য কোম্পানি কমান্ডার আবু সিদ্দিক আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে শহরে অবস্থান নেন। একদল মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী-র সদস্যরা শহরের উত্তর দিকে এবং অন্যদল দক্ষিণ দিকে কৃষিফার্মে অবস্থান নেয়। পাকসেনারা ময়মনসিংহের পথ ধরে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করার জন্য দক্ষিণ দিকে শক্ত অবস্থান নেয়া হয়। আবু সিদ্দিক আহমেদের নেতৃত্বে ৩০০ মুক্তিযোদ্ধা এদিকে এম্বুশ করেন।
নেত্রকোনা শহরের উত্তরদিক থেকে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণ শুরু হয়। পাকবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল অক্রমণ চালিয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকবাহিনী পরাজিত ও বিপর্যস্ত হয়। যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। এ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জব্বার খাঁ ওরফে আবু খাঁ (পিতা হাসান খাঁ, গাবরাগাতী), আবদুস সাত্তার (পিতা ডোমন শেখ, গাবরাগাতী) ও আবদুর রশিদ (পিতা সদর মণ্ডল, কাঠপোড়া, ইউনিয়ন মৌগাতী) শহীদ হন। আহত হন আবু সিদ্দিক আহমেদ। এ-যুদ্ধের পর ৯ই ডিসেম্বর নেত্রকোনা শহর সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড