নেহাব গ্রামের যুদ্ধ (নরসিংদী সদর)
নেহাব গ্রামের যুদ্ধ (নরসিংদী সদর) সংঘটিত হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনবার।
নরসিংদী থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান দুর্গ ছিল নেহাব গ্রামে। এ গ্রামের সন্তান সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ওরফে ন্যাভাল সিরাজ নরসিংদীর বাগবাড়ি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর এখানে একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলেন, যার নাম ছিল ন্যাভ্যাল সিরাজ বাহিনী। তাঁর এবং মুহম্মদ ইমাম উদ্দিনের নেতৃত্বে নেহাব গ্রামে সর্বপ্রথম বাঁশের লাঠি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তারপর ক্রমশ নেহাব গ্রাম পাকবাহিনীর পক্ষে এক দুর্ধর্ষ এলাকা হয়ে ওঠে। এখান থেকেই নরসিংদী থানা ও এর আশপাশ এলাকার যাবতীয় যুদ্ধ ও অপারেশন পরিচালিত হতে থাকে। জিনারদীর যুদ্ধ, মূলপাড়ার যুদ্ধ ও পাঁচদোনার যুদ্ধ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধারা যখন বিভিন্ন অপারেশন চালাতেন, তখন পাকবাহিনী অতিষ্ঠ হয়ে উঠত এবং তাদের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি হতো। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিহত করার জন্য তারা নেহাব গ্রামে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনবার হামলা চালায়। কিন্তু প্রতিবারই বীর মুক্তিযোদ্ধারা ইমাম উদ্দিনের নেতৃত্বে তাদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। উল্লেখ্য যে, নেহাব গ্রামটি ছিল একটি অজ পাড়াগাঁ। যুদ্ধকালীন সময়ে এখানে যাতায়াতের তেমন কোনো সুব্যবস্থা ছিল না। গ্রামের দুমাইল দক্ষিণে ছিল ডাঙ্গা-কালিগঞ্জ রাস্তা এবং মাইল খানেক উত্তরে পূর্ব- পশ্চিমে ছিল জিনারদী থেকে আসা জেলা বোর্ডের একটি কাঁচা রাস্তা। রাস্তাটিও আবার মাঝে মাঝে ছিল ভাঙ্গা। হানাদারদের জিনারদী ক্যাম্প ছিল নেহাব গ্রাম থেকে ৩ মাইল পূর্ব-উত্তর দিকে। এমনি অবস্থায়ও হানাদাররা বারবার নেহাব গ্রামে আক্রমণ করে।
থানা কমান্ডার ইমাম উদ্দিন ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা আ. হাকিমের নেতৃত্বে কালাম, ছালাম, সাহাবুদ্দিন, সাব্দি, লতিফ, বিল্লাল, ফজলু, ছাবেদ আলী, হারিছ খান, ইব্রাহিম, ওয়ারিশ খানসহ আরো কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এসব প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। [মুহম্মদ ইমাম উদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড