You dont have javascript enabled! Please enable it!

নোঙ্গর স্মৃতিস্তম্ভ (মংলা, বাগেরহাট)

নোঙ্গর স্মৃতিস্তম্ভ (মংলা, বাগেরহাট) বাগেরহাট জেলার মংলা বন্দর পৌরসভা থেকে কয়েকশ গজ পশ্চিমে মংলা পুরাতন থানার সামনে (পুরাতন এলএমডি অফিস) অবস্থিত। এর নির্মাতা শিল্পী মাসুদ-উন-নবী। স্তম্ভটির পরিকল্পনা নিমজ্জমান জাহাজের এক মাথায় বিজয় পতাকা হাতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদের ধ্বংস করে উল্লাসে ফেটে পড়ছেন। দুর্বার তারুণ্যের প্রতীক এ স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে চারপাশে আঁকা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী সহ ১০ জন সেক্টর কমান্ডারের ছবি। তাঁরা হলেন- মেজর জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম, মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম, মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম, মেজর সি আর দত্ত, বীর উত্তম, মেজর মীর শওকত আলী, বীর উত্তম, এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার, বীর উত্তম, মেজর কাজী নূরুজ্জামান, বীর উত্তম, মেজর আবু ওসমান, মেজর আব্দুল জলিল ও মেজর আবু তাহের, বীর উত্তম। ১০নং সেক্টর কমান্ডারের ছবি নেই। সেখানে লেখা আছে, ‘এ সেক্টরের অধীনে ছিল নৌ কমান্ডো’।
১৯৭১ সালের ৯ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও বিবিসি প্রচার করে যে, পাকসেনারা বন্দরের পশুর নদী দিয়ে জাহাজে করে পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সংগ্রহে আছে এদেশের বিপুল পরিমাণ সম্পদ। এ খবর শুনে ভারতীয় বিমান বাহিনী আকাশপথে তাদের আক্রমণের চেষ্টা চালায় এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পুরাতন থানায় জড়ো হন। ভারতীয় বিমান কয়েকটি পাক দিয়ে থানার সামনে এসে একটি বোমা ফেলে চলে যায়। বোমাটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পাশের একটি ডোবায় পড়ে এবং মাটির বেশ গভীরে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। কাদামাটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সেখানে ছোট একটি পুকুরের মতো হয়ে যায়। এতে কেউ নিহত না হলেও যারা উৎসুক হয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের অনেকেই আহত হন। সেই বোমা বিস্ফোরণের জায়গায়ই ২০১৬ সালে এ বিজয়স্তম্ভটি নির্মিত হয়।
১০ই ডিসেম্বর ভারতীয় বিমান ভুলক্রমে ঢাংমারীর কাছে পশুর নদীর ৮নং বয়ার নিকট ডেনমার্কের একটি চালবাহী জাহাজে আরেকটি বোমা ফেলে। বোমার আগুনে জাহাজটি দাউদাউ করে জ্বলে উঠলে মংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অমরেন্দ্র বিশ্বাস ও সহযোদ্ধা মহানন্দ মণ্ডল নিজেদের জীবন বাজি রেখে জাহাজের ৩৪জন ক্রুকে উদ্ধার করেন। শেলাবুনিয়া সেন্ট পল্স মিশনে তাঁদের আহার ও চিকিৎসা দিয়ে ডেনমার্কে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাঁদের মধ্যে একজন মারা গেলে তাকে এখানেই সমাহিত করা হয়। [মনোজ কান্তি বিশ্বাস]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!