You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর উত্তম নূরুল আমিন

নূরুল আমিন, বীর উত্তম (জন্ম ১৯৫২) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫২ সালের ২রা জুন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পাশাকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বাদশা মিয়া এবং মাতার নাম আশ্রাফেন নেছা। তিনি ১৯৬৫ সালে মুন্সিরহাট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং চট্টগ্রাম ইপিআরসি থেকে প্রশিক্ষণ শেষে সৈয়দপুর সেনানিবাসে ৩য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে পোস্টিং পান।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে নূরুল আমিন নায়েক সুবেদার পদে সৈয়দপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। মার্চ মাসে তাঁর কোম্পানিকে গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে মোতায়েন করা হয়। ২৫শে মার্চ পাকিস্তান বাহিনী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা শুরু করলে তিনি তাঁর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আফতাব আলী, বীর উত্তম, বীর প্রতীক-এর নেতৃত্বে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের তৎপরতার জন্য রৌমারী এলাকা আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর দখলে ছিল। রৌমারী অঞ্চলে অবস্থান নিয়ে তিনি অসাধারণ বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে ৬নং সেক্টর থেকে পলাশবাড়ি, কাটাখালী ব্রিজ, গাইবান্ধা, কামারদাড়ী, রৌমারী, রাজিবপুর, কোদালকাঠি, দুর্গাপুর, উলিপুর প্রভৃতি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের দুর্গাপুর যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মে মাসের শেষদিক থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুর্গাপুরে একটি বড় ঘাঁটি স্থাপন করে। ফলে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা ঐ এলাকায় কমে যায়। ১৭ই জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা ঐ ঘাঁটি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন নূরুল আমিনI ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত দুপক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। অসীম সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করে এক পর্যায়ে নূরুল আমিন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেন। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু ঘাঁটি দখল করতে না পারলেও পাকিস্তানি বাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাদের বহু সৈন্য হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদেরও কয়েকজন শহীদ এবং অনেকেই আহত হন।
পরবর্তীতে নূরুল আমিন ১১নং সেক্টরের কামালপুর ও বকশীগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার নায়েক সুবেদার নূরুল আমিনকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪২, খেতাবের সনদ নং ২৮)। তিনি এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম দেলোয়ারা আক্তার। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে তিনি অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!