বীর প্রতীক নূরুল ইসলাম খান পাঠান
নূরুল ইসলাম খান পাঠান, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৫১) কলেজে অধ্যয়নকালে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫১ সালের ৬ই নভেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলাধীন গড়মাছুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুস সাত্তার খান পাঠান ও মাতার নাম রাবেয়া আক্তার খাতুন। ১৯৭১ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
গাজীপুর থেকে বিদ্রোহ করে মেজর কে এম সফিউল্লাহ, বীর উত্তম তাঁর অধীন বাঙালি সেনাদের নিয়ে ৩০শে মার্চ কিশোরগঞ্জ গিয়ে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পুনর্গঠন ও সদর দপ্তর স্থাপন করেন। মেজর সফিউল্লাহ কিশোরগঞ্জে পৌঁছলে সেখানকার সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে স্বাগত জানায়। এ-সময় নূরুল ইসলামসহ অনেকেই তাঁদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগদান করেন। মেজর সফিউল্লাহ ১লা এপ্রিল তাঁর সদর দপ্তর কিশোরগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোতে স্থানান্তর করেন। ঐ সময় নূরুল ইসলাম ২য় ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কিশোরগঞ্জ থেকে তেলিয়াপাড়ায় যান। সেখান থেকে আগরতলা গিয়ে অম্পিনগরে তিন মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর ৩নং সেক্টরে গণবাহিনীর সদস্য হিসেবে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম এ মতিনের অধীনে যোগদান করে বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হলো চাঁনপুর যুদ্ধ।
নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে কমান্ডার হিসেবে একটি দল নিয়ে তিনি আখাউড়ার চাঁনপুর গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করেন। ডিসেম্বরের প্রথমদিকে পাকবাহিনীর একটি বিরাট বহর এ ক্যাম্প আক্রমণ করে। শত্রুদের সাঁড়াশি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশ পশ্চাদপসরণ করলে কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে নূরুল ইসলাম যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। সহযোদ্ধা জামান মজুমদার, রফিকুল হক, খায়রুল বাশার খান পাঠান প্রমুখকে নিয়ে তিনি একের পর এক গ্রেনেড চার্জ করে পাকবাহিনীর অগ্রযাত্রা রোধ করতে সক্ষম হন। এতে বেশ কয়েকজন শত্রুসেনা নিহত হয়। তাঁর নেতৃত্বে এ সাহসিকতাপূর্ণ প্রতিরোধ লক্ষ করে পিছু হটে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসেন। উভয় পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলে এক সময় শত্রুরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার ধরা পড়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ নূরুল ইসলাম খান পাঠানকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম সানজিদা খান। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড