You dont have javascript enabled! Please enable it!

সিপাহি ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা

নূরুল হক, বীর প্রতীক (১৯৪৬-১৯৭১) সিপাহি ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৬ সালে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাহেদাপুরের আকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুস সোবহান এবং মাতার নাম রায়েতুন নেছা। তিনি আকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।
নূরুল হক ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস-এ যোগদান করেন। ঢাকার পিলখানা থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলে তিনি পঞ্চগড়ে ১০নং ইপিআর উইংয়ে নিয়োগ পান। ৭১-এ ১০নং ইপিআর উইংয়ের সহকারী উইং কমান্ডার ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরে সেনানিবাস ত্যাগ করে তিতাস নদীর তীরে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলেন। তাঁর সঙ্গে সিপাহি নূরুল হকসহ ইপিআর-এর অসংখ্য সৈনিক বেরিয়ে এসে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। এরপর তাঁরা ভারতে যান। সিপাহি নূরুল হক ৬ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এম খাদেমুল বাশারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ভোজনপুর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নজরুল হক ও স্কোয়াড্রন লিডার সদরউদ্দিনের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন।
অমরখানা ও জগদলহাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুটি ঘাঁটি ছিল। অন্যদিকে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া সড়কের পূর্বপাশে অমরখানা-জগদলহাট এলাকার উত্তর-দক্ষিণে চাওই নদের পশ্চিম পাশে মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনীর একটি দলে সিপাহি নূরুল হক ছিলেন। ২২শে নভেম্বর রাতে পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার অমরখানায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণের জন্য নূরুল হকের দলসহ মুক্তিযোদ্ধাদের ৩টি গ্রুপ অংশ নেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্টিলারি সহায়তায় নূরুল হক বীর বিক্রমে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে এবং অমরখানা
মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। অধিনায়কের নির্দেশে নুরুল হক ২৩শে নভেম্বর পঞ্চগড়ে পাকিস্তানিদের অপর ঘাঁটি জগদলহাটে আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাঁদের তুমুল যুদ্ধ হয়। ক্যাম্পের চারদিকে পাকিস্তানি সেনারা মাইন বুবিট্র্যাপ পুঁতে রেখেছিল। নূরুল হক মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মূল প্রতিরক্ষায় ঢুকে পড়েন৷ অসীম সাহসিকতার সঙ্গে গুলি করতে-করতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলি তাঁর বুক ভেদ করে বেরিয়ে গেলে ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শন ও জীবন উৎসর্গ করায় বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হককে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব প্রদান করে। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [রীতা ভৌমিক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!