You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক নূরুল হুদা

নূরুল হুদা, বীর প্রতীক (১৯২৯-২০০৮) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৯ সালের ১৯শে নভেম্বর কক্সবাজার সদর থানার দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. সোলাইমান এবং মাতার নাম ছেমন খাতুন। তিনি কক্সবাজার সেন্ট্রাল প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনার পর কক্সবাজার হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
নূরুল হুদা ১৯৫১ সালের ৯ই জানুয়ারি ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)-এযোগদান করেন। ঢাকার পিলখানায় প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৫১ সালের ৩১শে জুলাই তিনি সৈনিক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে ২নং উইংয়ের ১১নং কোম্পানিতে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে তিনি হাবিলদার পদে উন্নীত হন এবং সাতক্ষীরায় কোম্পানির দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ঢাকায় এক মাসের প্রি-ইন্টেলিজেন্স এবং রাওয়ালপিন্ডিতে তিন মাসের ইন্টেলিজেন্স কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর পূর্ব- পাকিস্তানে ফিরে এসে তিনি ৫নং উইংয়ের ইন্টেলিজেন্সের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি পুনরায় রাওয়ালপিন্ডিতে ৬ সপ্তাহের সিকিউরিটি কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৭১ সালে নূরুল হুদা ইপিআর-এর নায়েব সুবেদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২৩শে মার্চ তিনি পাকিস্তানের জম্বুরিয়া ইসলামিয়া দিবসে অন্য কয়েকজন ইপিআর সদস্য নিয়ে যশোর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে বাংলাদেশের মানচিত্র- খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। ২৭শে মার্চ তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিদে করেন এবং বাঙালি সদস্যদের নিয়ে অস্ত্রাগার ভেঙ্গে সকল অস্ত্র নিজেদের দখলে নেন। তাঁরা অবাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র করে নড়াইল জেলে বন্দি করেন। পরে হানাদার বাহিনী যশোর দখলে অগ্রসর হলে তাঁরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। তাঁরা যুদ্ধ করতে-করতে এক পর্যায়ে নাভারন হয়ে বেনাপোল যান। এপ্রিলের শেষদিকে তাঁরা ভারতের পেট্রাপোলে অবস্থান নেন এবং শিকারপুর, মহানন্দপুর, বনগাঁ, বসিরহাট, বয়রা প্রভৃতি স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করেন। পেট্রাপোল থেকে কল্যাণী গিয়ে তাঁরা রিয়ার হেডকোয়ার্টার্স এবং কৃষ্ণনগরে হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করেন। এখান থেকে তাঁরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন। ৩-৪ঠা ডিসেম্বর তাঁরা বেনাপোল হয়ে যশোরে প্রবেশ করেন। নূরুল হুদা চুরামনকাটি, ফুলতলা, নোয়াপাড়া প্রভৃতি স্থানে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার নূরুল হুদাকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ৪৩৮, খেতাবের সনদ নং ১৮৮)। স্বাধীনতার পর তিনি বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এ যোগদান করেন এবং সুবেদার মেজর হিসেবে ১৯৮৫ সালে অবসরে যান। ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম দিলদার বেগম। ২০০৮ সালের ৬ই মার্চ তিনি কক্সবাজারে মৃত্যুবরণ করেন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!