মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নুরুল ইসলাম চৌধুরী
নুরুল ইসলাম চৌধুরী (১৯২৫-১৯৯৫) শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। তিনি ১৯২৫ সালের ২৩শে জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার গোবিন্দরখীল গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার সরকারি চাকরির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁকে লেখাপড়া করতে হয়। তিনি ১৯৪২ সালে বরিশাল জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস ও ১৯৪৪ সালে কলকাতা স্কটিস চার্চ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ পাস করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ এবং ১৯৫৪ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। নুরুল ইসলাম চৌধুরী বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। বরিশালে লেখাপড়া করার সময় তিনি ছাত্র-রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৪৬-৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি তদানীন্তন বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্রলীগ-এর চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের ধর্মঘটের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে ভাষা – আন্দোলন-এ তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২- ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৫৩-১৯৫৮ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সদর মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজনৈতিক কারণে কয়েকবার কারাবরণ করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ১৯৫২-১৯৭১ সাল পর্যন্ত স্যার আশুতোষ কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী পটিয়া অঞ্চলে প্রাথমিক পর্যায়ে সরাসরি যুদ্ধ পরিচালনা করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ফেনী নিয়ে গঠিত ১ নম্বর জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং পূর্বাঞ্চল যুবশিবিরের এক নম্বর সেক্টরের পরিচালক ছিলেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির তিনি একজন সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে প্রথমে শিল্প প্রতিমন্ত্রী, পরে প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, পটিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম আইন কলেজ ও আর্য সঙ্গীত বিদ্যালয় পরিচালনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। ১৯৯৫ সালের ৩রা অক্টোবর তিনি চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মরজিয়া ইসলাম চৌধুরী। [জামালউদ্দিন আহমেদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড
l