You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি নূর মোহাম্মদ বাবুল - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি নূর মোহাম্মদ বাবুল

নূর মোহাম্মদ বাবুল (জন্ম ১৯৩৪) আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি ও ফরিদপুর জেলা মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ‘ক্যাপ্টেন বাবুল’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর আসল নাম নূর মোহাম্মদ। তাঁর পিতার নাম তমিজ উদ্দিন আখন্দ। তিনি ১৯৩৪ সালের ২রা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবুলের জন্মস্থান ও পৈতৃক নিবাস মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কুমারভোগ গ্রামে হলেও তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফরিদপুর শহরে। তাঁর পিতা ফরিদপুর ব্যবসা করতেন এবং সপরিবার সেখানে থাকতেন। বাবুল হিতৈষী স্কুল ও ফরিদপুর জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে গুলির প্রতিবাদে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। তিনি স্কুল থেকে মিছিল নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেন। এর এক বছর পর তিনি বয়েজ নৌবাহিনীতে যোগ দেন। চাকরি জীবনে লিডিং সিম্যান হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
ষাটের দশকে লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে যে-কজন নৌসেনা গোপনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ৩৫ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ বলে কথিত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। তিনি ছিলেন এ মামলার ৫ নম্বর আসামি। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে আগরতলা মামলা প্রত্যাহৃত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে নূর মোহাম্মদও মুক্তিলাভ করেন। ৭১-এর ২৬শে মার্চের পর বাবুল মুন্সীগঞ্জের নিজ গ্রামে যুবকদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন গড়ে তোলেন। ১০ই মে মাদারীপুর মহকুমার ভেদরগঞ্জ থানা দখল যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দেন। ১৪ই মে তাঁর নেতৃত্বে ডামুড্যায় পাকিস্তানি দখলদারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ পরিচালিত হয়। এ-যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। এখানে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৩০শে মে তিনি হেমায়েত বাহিনী-কে সঙ্গে নিয়ে কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া থানা শত্রুমুক্ত করেন। জুলাই মাসে তিনি মেজর জলিলের অধীনে ৯ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন৷ আগস্টে কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ফরিদপুরে প্রবেশ করেন এবং গোপালগঞ্জ মহকুমার ওড়াকান্দীতে হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করেন। ফরিদপুর সদর ও গোপালগঞ্জের কমান্ডাররা তাঁকে জেলা অধিনায়ক হিসেবে বরণ করেন।
৩০শে নভেম্বর গোপালগঞ্জ মহকুমা শহর হানাদারমুক্ত হয়। ১৭ই ডিসেম্বর ফরিদপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনী এ অঞ্চলের যৌথবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রাজেন্দ্রনাথের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ক্যাপ্টেন বাবুল মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন। সৎ ও নীতিবান মানুষ হিসেবে ক্যাপ্টেন বাবুল সবার কাছে সমাদৃত। মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি মুক্তিযোদ্ধা দলের কাছে ব্যাংক থেকে নেয়া এক কেজি সোনা উদ্ধার করে তিনি সরকারি কোষাগারে জমা দেন। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের আহ্বায়ক। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত। [আবু সাঈদ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড