স্থানীয় মুক্তিবাহিনী নূর মোহাম্মদ বাহিনী (চিতলমারী, বাগেরহাট)
নূর মোহাম্মদ বাহিনী (চিতলমারী, বাগেরহাট) একটি স্থানীয় মুক্তিবাহিনী। বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানায় কোম্পানি কমান্ডার নূর মোহাম্মদ উকিল (পিতা ফহম উদ্দিন, বড়বাড়িয়া)-এর নামে এ বাহিনী গড়ে ওঠে। এ বাহিনীর হাতে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত এবং একাধিক ক্যাম্প আক্রান্ত হয়। এ বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন বড়বাড়িয়া গ্রামের এম ফরাদ, ইউনুছ শেখ, আ. আলী শিকদার, আ. হাকিম, ইসহাক মোল্লা, আ. রব ফকির, শহিদুল ইসলাম, শেখ সেকেন্দার আলী, শিবপুরের সৈয়দ আলী শেখ, চাঁদ মিয়া এবং নূর মোহাম্মদের দুই সহোদর মোস্তাক উকিল ও খয়ের উকিল। চিতলমারী উপজেলায় আপন তিন ভাইয়ের মুক্তিবাহিনীতে যোগদানের কারণে নূর মোহাম্মদ উকিলের পরিবার স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে খ্যাত।
নূর মোহাম্মদ ১৯৭১ সালে খুলনা বি এল কলেজের বিএ ক্লাসের পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি চিতলমারীর নালুয়া বাজার থেকে ৫২ জনের একটি দল নিয়ে জুলাই মাসে ভারতে রওনা হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ দলের ২৩ জনসহ বাগদা সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাটে টাকিপুর রিসিপশন ক্যাম্পে পৌঁছান। এর একদিন পর টাকিপুর থেকে তাঁকে পিফা ক্যাম্পে নিয়ে অফিসার পদে নিযুক্ত করার জন্য পরীক্ষা নেয়া হয়। তিন সদস্যবিশিষ্ট পরীক্ষক কমিটি ২৩০০ জনের মধ্য থেকে মাত্র ১০ জনকে বাছাই করে। এ ১০ জনের একজন ছিলেন নূর মোহাম্মদ উকিল। পিফা ক্যাম্প থেকে তাঁকে প্রশিক্ষণের জন্য বীরভূমে নেয়া হয়। ৪ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে উত্তর বাগেরহাটের সাব-সেক্টর কমান্ডার তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিনি বাগদা সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তাজুল ইসলামের অধীনে ২টি কোম্পানি ও ১৪ জনের একটি আর্টিলারি ইউনিটসহ মোট ২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নূর মোহাম্মদ উকিল ছিলেন একটি কোম্পানির অধিনায়ক। কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে একটি স্টেনগান ও ৬টি নেটওয়ার্ক কভারেজ সম্পন্ন একটি ওয়ারলেস সেট নূর মোহাম্মদ উকিলকে দেয়া হয়। এ কোম্পানি স্থানীয়ভাবে নূর মোহাম্মদ বাহিনী হিসেবে পরিচিতি পায়।
বাগেরহাট থেকে চিতলমারীর প্রবেশদ্বার ধোপাখালীর ফুলতলার ঠাকুর বাড়িতে নূর মোহাম্মদ বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। তাঁর বাহিনী যেহেতু ফ্রন্টলাইনে ছিল, তাই আর্টিলারি ইউনিটকে তাঁর অধীনে ন্যস্ত করা হয়। চিতলমারীর দক্ষিণে বাগেরহাটের মুক্ষাইট যুদ্ধে তাঁর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। এ-যুদ্ধে তাঁরা বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। ২৫শে অক্টোবর সকালে মুনিগঞ্জ খেয়া পার হয়ে একদল পাকসেনা দেপাড়ার দিকে এগিয়ে এ বাহিনীর সদস্যদের নাগালের মধ্যে পৌঁছলে তাদের ওপর এলএমজি-র ব্রাশফায়ার করা হয়। এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। নিহত পাকসেনাদের মধ্যে এক বালুচ মিলিশিয়াও ছিল। এ বালুচ মিলিশিয়ার লাশ চিতলমারী এনে গোভাগাড়ে রাখা হয়। কচুয়া উপজেলার মঘিয়ার মমিন উদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্প এ বাহিনীর সদস্যরা আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ এলাকায় পাকসেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে নূর মোহাম্মদ বাহিনীর সদস্যরা অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেন। [মনীন্দ্র নাথ বোস]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড