নূরপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বধ্যভূমি (পাবনা সদর)
নূরপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বধ্যভূমি (পাবনা সদর) পাবনা শহর সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাওবাদী নকশাল, আলবদর বাহিনী ও এ দেশীয় অন্যান্য দালালরাজাকারদের সহায়তায় বহু মানুষকে এখানে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পূর্বে তাদের অধিকাংশকে শহরের ডাকবাংলো নির্যাতন কেন্দ্রে রেখে চরম নির্যাতন চালানো হতো। অধিকাংশ লাশ তারা উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখত। সেসব লাশ কুকুর-শেয়ালের খাদ্যে পরিণত হতো। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২-১ দিন পূর্বেও তারা এখানে মানুষজনকে হত্যা করে।
১১ই এপ্রিল বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী পাবনা শহরে প্রবেশ করেই সার্কিট হাউস ও নূরপুর ডাকবাংলোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। নূরপুর ডাকবাংলোতে তারা অফিস স্থাপন করে এবং এ ডাকবাংলোয় ছিল তাদের বিচারিক দপ্তর। ডাকবাংলোর পাশেই ছিল নূরপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধকালে এটি একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকাটি ছিল অনেকটা নির্জন এবং জঙ্গলাকীর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনায় মাওবাদীদের বড় ধরনের প্রভাব ছিল। তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। মাওবাদী নকশালরা, পাবনায় আলবদর বাহিনীর প্রধান আব্দুল মতিন ঘেটু ও দেশীয় অন্যান্য দালালরাজাকাররা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে গণহত্যায় সর্বপ্রকার সহযোগিতা করে। তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সৈন্যরা বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ লোকদের ধরে এনে ডাকবাংলো ও অন্যান্য নির্যাতনকেন্দ্রে অমানুষিক নির্যাতনের পর নূরপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্জন স্থানে হত্যা করত। তারা দু-একটা লাশ মটিচাপা দিলেও বেশির ভাগ লাশ উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখা হতো এবং সেগুলো শেয়াল-কুকুরে খেতো। অনেক সময় গুলি না করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করা হতো। নূরপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র বাধ্যভূমিতে শুধু পাকিস্তানি সৈন্যরাই নয়, বিহারি, মিলিশিয়া, রাজাকার, আলবদর ও নকশাল বাহিনীর লোকেরাও অনেক লোককে এখানে এনে হত্যা করে। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক হলো এ বধ্যভূমিতে মৃত মানুষের সঙ্গে অর্ধমৃত মানুষকেও মাটিচাপা দেয়া হতো। অনেককে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২-১ দিন পূর্বে হত্যা করা হয়। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত মানুষের দেহের ছিন্নভিন্ন অংশ বধ্যভূমির চারপাশে পড়ে থাকতে দেখা যায়। [মো. ছাবেদ আলী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড