You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.04 | নীলখোলা গণহত্যা (কালকিনি, মাদারীপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

নীলখোলা গণহত্যা (কালকিনি, মাদারীপুর)

নীলখোলা গণহত্যা (কালকিনি, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ৪ঠা ডিসেম্বর। এতে ৯ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। ঘটনার দিন কিছু সশস্ত্র যুবক গোপালপুর বাজারে এসে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে তারা ছিল -আলবদর-। তারা জানায় যে, রাস্তায় পাকসেনারা ঘোরাফেরা করছে। কোথায় পজিশন নিলে পাকসেনাদের আক্রমণ করা যাবে সে-বিষয়ে তারা গ্রামবাসীর পরামর্শ চায়। গোপালপুর গ্রামের সরলপ্রাণ মানুষ কাজী আবদুল রক্তন ছদ্মবেশী আলবদরদের কথায় বিশ্বাস করে পজিশন নেয়ার জন্য মসজিদের কাছে একটি ফাঁকা স্থান দেখিয়ে দেন। তাঁর ছেলে কাজী আবদুল ওদুদ যে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে গেছেন, এ কথাও তিনি তাদের জানিয়ে দেন। কাজী আবদুল রত্তন খুব অতিথিপরায়ণ লোক ছিলেন। তিনি তাদের আপ্যায়ন করার ইচ্ছে প্রকাশ করলে আলবদররা তাঁর বাড়িতে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আসার খবর পেয়ে পাশের বাড়ি থেকেও কিছু লোক আসে। উঠোনে বসে গুড়-মুড়ি খাওয়া শেষ হতেই আলবদররা উপস্থিত ১১ জনের মধ্যে ৯ জনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। দুজনকে খালি রাখে গুলির পেটি বহন করানোর জন্য। সবাইকে তারা মোস্তফাপুর- বরিশাল মহাসড়কে নিয়ে আসে। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষা করছিল পাকসেনারা। এখান থেকে সামান্য দূরে নীলখোলা নামক স্থানে এসে পাকসেনারা সবাইকে একটি খালের কিনারে লাইনে দাঁড় করায়। কাজী আবদুল মান্নান (পিরাইপাড়া) নামে একজন কৌশলে হাতের বাঁধন খুলে প্রাণ বাঁচাতে খালের পানিতে ঝাঁপ দিলে প্রথমেই তাঁকে তারা গুলি করে হত্যা করে। এরপর বাকি ৮ জনকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
নীলখোলা গণহত্যায় নিহতদের ৮ জন ছিলেন গোপালপুর গ্রামের। তারা হলেন- কাজী আবদুল রত্তন (পিতা কাজী আব্দুল মোতালেব), কাজী আবদুল মাজেদ (পিতা কাজী আহম্মদ আলী), মনু কাজী (পিতা আবদুল হামিদ কাজী), নোয়াব আলী নক্তি (পিতা মোন্তাজ আলী নক্তি), জোনাবালী নক্তি (পিতা মোন্তাজ আলী নক্তি), নোয়াব আলী কাজী (পিতা আবদুর রশিদ কাজী), সামসু খন্দকার (পিতা তফেল খন্দকার) ও আবদুল খালেক। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড