নীলফামারী সরকারি কলেজ বধ্যভূমি ও গণকবর (নীলফামারী সদর)
নীলফামারী সরকারি কলেজ বধ্যভূমি ও গণকবর (নীলফামারী সদর) এ এলাকায় পাকবাহিনীর সবচেয়ে বড় ক্যাম্প। এ ক্যাম্প ছিল সদর থানার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি ও গণকবর। ২৩শে মার্চ থেকে শুরু করে ১৪ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বধ্যভূমিতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ২৩শে মার্চ নীলফামারী সদরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গায় বেশ কিছু বাঙালি হতাহত হয়। এরপর থেকে নীলফামারী সদরে আলবদর, আলশামস, রাজাকারদের নেতৃত্বে গণহত্যা সংঘটিত হয়। এই বধ্যভূমিতে কতজনকে হত্যা করা হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রতিদিনই পাকবাহিনী এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে এনে বহু লোককে হত্যা করে।
এ ক্যাম্পে নীলফামারী পৌরসভার সবুজপাড়ার মো. কাশেম খানকে বন্দি করে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাকসেনারা ২২ দিন পর ছেড়ে দেয়। একইভাবে ১৯ হাজার টাকা নিয়ে পাবনাপট্টির কচিমুদ্দিন কেরানিকে ছেড়ে দেয়। অর্থ না দিলে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। হত্যার পর কলেজের একাধিক জায়গায় লাশ পুঁতে রাখত কিংবা পুরাতন মসজিদের পেছন দিয়ে প্রবহমাণ খালের মধ্যে ফেলে দিত। দারোয়ানি থেকে একদিন ৭ জন এবং আরেকদিন ১১ জনকে হত্যা করে পাকবাহিনী খালের স্রোতে লাশগুলো ভাসিয়ে দেয়।
নীলফামারী সরকারি কলেজ ক্যাম্পে সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি ও গণকবর হলো ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সেমিনার কক্ষের পেছনের ইঁদারা। এ ইঁদারার মধ্যে দুশতাধিক লাশ ফেলে দেয়া হয়। কলেজের ১১নং কক্ষে ড্রামের মধ্যে গরম পানিতে বন্দিদের মাথা চুবিয়ে অত্যাচার ও নির্যাতন করে হত্যা করা হতো।
পাকবাহিনী বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ধরে এনে ১০- ১২ জনের দ্বারা প্রথমে গর্ত খনন করাত। তারপর বন্দিদের ১০-১২ জনকে এক সঙ্গে লাইন করে গুলিতে হত্যা করে গর্তে পুঁতে রাখত। কলেজের ছাত্রাবাস ও কলেজ স্টেশনের পাশে বালুর চরের মধ্যে এভাবে গর্ত খনন করে শতশত মানুষকে পুঁতে রাখা হয়। সরকারি কলেজ ক্যাম্পে পাকবাহিনী শান্তি কমিটির নেতা এডভোকেট আব্দুল লতিফের সহায়তায় বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মীকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা মো. মাহফুজার রহমান (দুলু মিয়া) ও ব্যবসায়ী নরেশ চন্দ্র রায়। নীলফামারী সরকারী কলেজ বধ্যভূমি ও গণকবরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। [আহমেদ শরীফ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড