ভারতের অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদ নীহাররঞ্জন রায়
নীহাররঞ্জন রায়, পদ্মভূষণ (১৯০৩-১৯৮১) ভারতের অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯০৩ সালের ১৪ই জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) ময়মনসিংহ জেলার কায়েত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয়ী স্কুল ও আনন্দ মোহন কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯২৪ সালে সিলেটের এম সি কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও ১৯২৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৩৬ সালে দেশে ফিরে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মুখ্য গ্রন্থাগারিক হিসেবে যোগদান করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, রিডার, রিসার্চ ফেলো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপত্র ক্যালকাটা রিভিউ-র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ ৩৫ বছরের অধিক নিয়োজিত ছিলেন।
রাজনীতি-সচেতন নীহাররঞ্জন প্রথমে অনুশীলন সমিতি ও পরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। ভারত ছাড় আন্দোলনে (১৯৪২) অংশগ্রহণের অপরাধে তিনি কারারুদ্ধ হন। ভারতের স্বাধীনতার পর তিনি ৮ বছর রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক (১৯৪৯- ৫০), সিমলার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব এডভান্সড স্টাডির প্রথম পরিচালক (১৯৬৫-৭০) ও তৃতীয় পে কমিশনের সদস্য (১৯৭০-৭৩) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৭টি বাংলা ও ১৫টি ইংরেজি গ্রন্থ ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজিতে তাঁর রচিত অসংখ্য প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ভাষণ ইত্যাদি রয়েছে। সেসবের মধ্যে উল্লেযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো- Political History of North৷ndia (1926), রবীন্দ্র সাহিত্যের ভূমিকা (১৯৩৯), বাঙালির ইতিহাস : আদি পর্ব (১৯৪৯), Nationalism৷n৷ndia (1973), An Approach to৷ndian Art (1974) ইত্যাদি। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫০), পদ্মভূষণ (১৯৬৯) ও সাহিত্য আকাদেমি সম্মাননা (১৯৬৯) লাভ করেন। তিনি ১৯৮১ সালের ৩০শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে এর সমর্থনে নীহাররঞ্জন পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বিভিন্ন সেমিনারে গণহত্যার তথ্য তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর মুক্তির দাবিতে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন এবং এ মর্মে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান।
মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০শে অক্টোবর ২০১২ নীহাররঞ্জন রায়-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড