You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর বিক্রম নিজাম উদ্দিন - সংগ্রামের নোটবুক

বীর বিক্রম নিজাম উদ্দিন

নিজাম উদ্দিন, বীর বিক্রম (শহীদ ১৯৭১) ল্যান্স নায়েক ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার মৌচাক ইউনিয়নের পূর্বপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সাইফুদ্দিন খান ও মাতার নাম ফাতেমা খাতুন।
নিজাম উদ্দিন ইপিআর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ৭১-এর মার্চ মাসে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইপিআর হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ক্যাপ্টেন নিয়াজের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে তিনি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। তাঁদের প্রতিরোধযুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত ও বন্দি হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজশাহী শহরে হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের ক্যান্টনমেন্টে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের উদ্ধারের জন্য পাকিস্তানি বাহিনী বিমান হামলা করে। ঢাকা থেকে ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যরা এসে পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। কৌশলগত কারণে এক পর্যায়ে নিজাম উদ্দিনসহ প্রতিরোধযোদ্ধারা পিছু হটে পদ্মা নদী পার হয়ে ভারতীয় সীমান্তবর্তী লালগোলায় অবস্থান নেন। এরপর নিজাম উদ্দিন ৭ নম্বর সেক্টরে যোগ দিয়ে এ সেক্টরের অধীন বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। নভেম্বর মাসে নিজাম উদ্দিনের দল পাকবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি পোড়াগ্রাম আক্রমণ করলে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন, কিন্তু নিজাম উদ্দিন বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যান। যুদ্ধরত অবস্থায় পাকিস্তানি সৈন্যদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে তিনি তাদের হাতে বন্দি হন। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে ‘পাকিস্তান-জিন্দাবাদ’ বলতে বললে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চকণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। সঙ্গে-সঙ্গে শত্রুসেনারা তাঁকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শন এবং জীবন উৎসর্গ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিনকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [হারুন রশীদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড