বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ নিবেদিতা নাগ
নিবেদিতা নাগ (১৯১৮-২০১৩) ভারতের রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯১৮ সালের ৪ঠা আগস্ট অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ) ঢাকার নারায়ণগঞ্জের আমলাপাড়ায় তাঁর নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৪ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জের হিসেবে কলেজ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৩৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও ১৯৪১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, কমিউনিস্ট আন্দোলন ও বাংলাদেশের ভাষা-আন্দোলন-এ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) সদস্য পদ লাভ করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর স্বামী কমরেড নেপাল নাগ ছিলেন পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সেক্রেটারি। ১৯৫৮ সাল থেকে নিবেদিতা নাগ সপরিবারে স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষা। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ভারতীয় নারীদের সামাজিক সংস্কারের পক্ষে কাজ শুরু করেন। তিনি লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর রচিত নেপাল নাগ : স্মৃতিচারণা পুস্তকটি প্রকাশিত হয়। তিনি ২০১৩ সালের ৫ই মে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) নেত্রী নিবেদিতা নাগ বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সম্ভাব্য সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেন। তিনি বামপন্থী গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। তিনি ও তাঁর স্বামী শরণার্থীদের কল্যাণেও সহায়তা করেন। তাঁদের বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি আশ্রয়স্থল।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ১৫ই ডিসেম্বর নিবেদিতা নাগ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড