You dont have javascript enabled! Please enable it!

নিশ্চিন্তপুর-কালিপুর যুদ্ধ (কুলাউড়া, মৌলভীবাজার)

নিশ্চিন্তপুর-কালিপুর যুদ্ধ (কুলাউড়া, মৌলভীবাজার) সংঘটিত হয় ২৭শে জুলাই। এতে ২০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়। এটি ছিল এ এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ।
নিশ্চিন্তপুর মনু নদীর এক পাড়ে কুলাউড়া থানার অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রাম। বিপরীতে নদীর অপর পাড়ে ভারত অংশে কালিপুর। হানাদারদের সঙ্গে পূর্বে এক লড়াইয়ে টিকতে না পারায় মুক্তিবাহিনীর চাতলাপুর ক্যাম্প কালিপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। কালিপুর ক্যাম্পে ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান ছিল। ভারতীয় ক্যাপ্টেন হামিদের নেতৃত্বে এ দল ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করে। ফলে পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযান প্রতিরোধ করতে সীমান্তে বেশ কয়েকটি ডেরা তৈরি করে সৈন্য ও গোলা-বারুদ জড়ো করতে থাকে। তা সত্ত্বেও মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা নিয়মিত গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ভয়ভীতি তৈরির জন্য ‘হিট এন্ড রান’ অভিযান পরিচালনা এবং ব্রিজ, কলকারখানা, রাস্তাঘাট, স্থল বন্দর ইত্যাদি ধ্বংস করা তাঁদের লক্ষ্য ছিল। এসব অভিযানের ফলে পাকহানাদাররা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের মনোবল অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়।
পাকিস্তানি হানাদারদের আলীনগর ক্যাম্প থেকে ১ কোম্পানি সৈন্য অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মেজর রফিকের নেতৃত্বের কালিপুরের দিকে নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কাছকাছি বৃন্দারানীর দিঘীর পাড়ে অবস্থান নেয়। দিঘীর পূর্ব ও দক্ষিণ দিক ঘেঁষে নিশ্চিন্তপুর গ্রাম। হানাদারদের অবস্থানের পর মুক্তিযোদ্ধারা ৩৮ জনের দুটি দলে বিভক্ত হন। এক দলের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন- নেতা শফিকুর রহমান এবং অপর দলের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুস সালাম চৌধুরী বাচ্চু। তাঁদের কাছে তুলনামূলকভাবে হালকা অস্ত্র ছিল।
২৭শে জুলাই ভোরে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমনের জন্য এগিয়ে আসে। হানাদাররা যখন নৌকায় ওপাড়ে যেতে ব্যস্ত, তখন মুক্তিযোদ্ধারা স্টেনগান, ২ ইঞ্চি মর্টার ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেন। পাকবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে ৪ ঘণ্টাব্যাপী তীব্র যুদ্ধ চলে। এক সময় পাকহানাদাররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ- যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ২০ জন সৈন্য নিহত হয়। তাদের দলনেতা মেজর রফিকসহ অনেকে আহত হয়। আবদুস সোবহান বাবুল নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা এ-যুদ্ধে শহীদ হন। সোহাগ মিয়া, ইয়াসিন আলী, মনোহর আলী, আনাই মিয়া, সুন্দর আলী, আহমদ আলী শাহ, আর্শাদ আলী, আজব আলী, আরজু খান প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা এ-যুদ্ধে অংশ নেন। আবদুল আহাদ চৌধুরী (পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান) ও সৈয়দ মহসিন আলী (পরে এমপি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী) অনেক দিন কালিপুরে উপস্থিত থেকে এ-যুদ্ধে অংশ নিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেন। [হাসনাইন সাজ্জাদী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!