নারায়ণখোলা যুদ্ধ (নকলা, শেরপুর)
নারায়ণখোলা যুদ্ধ (নকলা, শেরপুর) সংঘটিত হয় ৩১শে আগস্ট। এতে ১৫ জন পাকসেনা ও ৩৩ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরপক্ষে ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় নারায়ণখোলা বাজার অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় নারায়ণখোলা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়াতের পথ। এ পথ বন্ধ করার জন্য রাজাকাররা ৩১শে আগস্ট নারায়ণখোলা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। খবর পেয়ে ডালু সাব-সেক্টর থেকে মনিরুজ্জামান কোম্পানি ও ফরহাদ হোসেন কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করার জন্য ৩০শে আগস্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ফরহাদ কোম্পানি নারায়ণখোলার পাশের গ্রাম দুধেরচরে অবস্থান নেয়৷ কোম্পানির এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে নারায়ণখোলার পাশে পাঠাকাটা গ্রামে অবস্থান নেয়। ৩১শে আগস্ট ভোরে মনির কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা এ প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন।
৩১শে আগস্ট পাকবাহিনী নারায়ণখোলা বাজারে আসার পথে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে রেহাই অস্টধর গ্রাম আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়। এদিকে পথে গৌড়দ্বার বাজারে রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে মনির কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে রাজাকার বাহিনী পিছু হটে নকলা ক্যাম্পে চলে যায়। তাদের ফেলে যাওয়া ৪টি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধারা উদ্ধার করেন। এ-সময় আব্দুল আলিম ভূতের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর অপর একটি দল (ভূত বাহিনী হিসেবে পরিচিত) পাঠাকাটা বাজারের পূর্বদিকে পজিশন নেয়। বাজারের উত্তরদিকে মনির বাহিনী এবং পশ্চিমদিকে আখক্ষেতে ফরহাদ বাহিনী অবস্থান নেয়। পাকবাহিনী নারায়ণখোলা বাজারের উত্তরে পাঠাকাটা বাজারের দক্ষিণে অবস্থান নেয়। পাকবাহিনীর অবস্থান বোঝার জন্য ভূত বাহিনী প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সঙ্গে-সঙ্গে পাকবাহিনী ব্রাশ ফায়ার করে পাল্টা জবাব দেয়। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গুলিবিনিময় হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ চলে। এতে ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বিকেল ৪টায় মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় শত্রুপক্ষের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। ভূত বাহিনী ও মনির কোম্পানি একত্রিত হয়ে পাঠাকাটা বাজারের উত্তরদিকে এবং ফরহাদ কোম্পানি বাজারের পশ্চিমদিকে কলাপাড়া রাস্তার পাশে আখক্ষেতে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসার সঙ্গে-সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাশ ফায়ার করলে যুদ্ধ শুরু হয়। রাত ১০টা ৩০মিনিট পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকসেনা ও রাজাকাররা নকলার দিকে পালিয়ে যায়। এ-যুদ্ধে ১৫ জন পাকসেনা ও ৩৩ জন রাজাকার নিহত হয়।
নারায়নখোলা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আকবর আলী (কিংকরপুর), জামাল উদ্দিন (ধনাকুশা), শাহেদ আলী ফকির (কুরসাবাধাগৈড়), হাসমত আলী (কুরসাবাধাগৈড়), হযরত আলী (কুরসাবাঁধাগৈড়), সুলতান (নারায়ণখোলা), অহেদ আলী (কুরসাবাধাগৈড়), তোফাজ্জল হোসেন (সরিষাবাড়ী) প্রমুখ। [এ কে এম মহিদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড