You dont have javascript enabled! Please enable it!

নান্দাইল থানা অপারেশন (নান্দাইল, ময়মনসিংহ)

নান্দাইল থানা অপারেশন (নান্দাইল, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় তিনবার – ১৭ই নভেম্বর, ২৮শে নভেম্বর ও ১১ই ডিসেম্বর। ১৭ই নভেম্বরের অপারেশনে ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নান্দাইলে এ দিনটি ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। ২৮শে নভেম্বরের অপারেশনে কয়েকজন মিলিশিয়া ও রাজাকার আহত হয়। ১১ই ডিসেম্বরের অপারেশনে নান্দাইল হানাদারমুক্ত হয়।
১৭ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নান্দাইল থানার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কোম্পানি কমান্ডাররা একাধিকবার একত্রিত হয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। নান্দাইল থানার দেওয়ানগঞ্জ ও হোসেনপুর থানার উত্তর এলাকা নিরাপদ ভেবে প্রায়ই মুক্তিযোদ্ধারা এখানে একত্রিত হয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। নান্দাইল থানা অপারেশনের জন্য হালিউড়া গ্রামের সফর আলী ভূঁইয়া চেয়ারম্যানের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, মুক্তিযোদ্ধারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে থানা অপারেশন করবেন। প্রথম দলে প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল কাদির, এ বি সিদ্দিক (পান্থপাড়া) ও মাজহারুল হক ফকির (পান্থপাড়া)-এর নেতৃত্বে ১৪ জন মুক্তিসেনা আচারগাঁও পুরনো ডাকবাংলো এলাকায়, ৭০ জনের দ্বিতীয় দল কোম্পানি কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম (ঈশ্বরগঞ্জ) ও নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে স্কুলের সামনে এবং ১২ জনের তৃতীয় দল হাছেন আলীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা সরাফ উদ্দিন ভূঁইয়া (পুরহরি আচারগাঁও) ও আব্দুল হেকিমসহ থানার পাশে এম্বুশ গ্রহণ করবে। পরিকল্পনায় ছিল, প্রথম গ্রুপ ফাঁকা আওয়াজ করার সঙ্গে- সঙ্গে ত্রিমুখী আক্রমণ শুরু হবে। কিন্তু যথাসময়ে এম্বুশ করতে না পারা এবং শান্তি কমিটি-র কমান্ডার থানায় জানিয়ে দেয়ায় হানাদার সেনারা সতর্ক অবস্থান নেয়। তথাপি দুপক্ষের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। এক পর্যায়ে গোলাবারুদের অভাবে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। এ-যুদ্ধে ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
যুদ্ধে সাহায্য করায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শাহ নেওয়াজ ভূঁইয়া এবং নান্দাইল থানার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশকিছু ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে ধরে এনে পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে। এ-যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস উদ্দিন (মেরাকোনা) নান্দাইল সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পাশে নদীর ধারে পাকবাহিনীর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটার পর ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ থেকে আরো কয়েকশ হানাদার পাকসেনা নান্দাইল এসে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ২৮শে নভেম্বর তোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর দলের মুক্তিযোদ্ধারা নান্দাইলে মিলিশিয়া ও রাজাকারদের পেট্রল দলের ওপর অতর্কিতে হামলা করেন। এতে কয়েকজন মিলিশিয়া ও রাজাকার আহত হয়। ১১ই ডিসেম্বর নান্দাইল থানা হানাদারমুক্ত হয়। নান্দাইলের অসংখ্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেন। তাদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন- শাহ নেওয়াজ ভূঁইয়া (নান্দাইল আওয়ামী লীগ-এর সভাপতি; ১৭ই নভেম্বরের যুদ্ধে শহীদ), শামসুল হক (চারিআনাপারা), রইস উদ্দিন ভূঁইয়া (চারিআনাপারা), চাঁন মিয়া (চারিআনাপারা), ছাবেদ আলী (চারিআনাপারা), হাবিবুর রহমান (ভাটি সাভার), আবুল হোসেন (চারভেলামরী, বেতাগৈর), নজরুল ইসলাম (চর উত্তরবন্দ, বেতাগৈর), মহিউদ্দিন (শোগিয়ানপুর, বেতাগৈর), খগেন্দ্র চন্দ্র মজুমদার (খামারগাঁও, চণ্ডীপাশা), হীরেন্দ্র চন্দ্র মজুমদার (খামারগাঁও, চণ্ডীপাশা), উপেন্দ্র চন্দ্র দেব (খামারগাঁও), সতীশ চন্দ্ৰ দেব (মুশুল্লী), জিল্লুর বারী (মোরগোলা, মুশুল্লী), দিগ্ৰেন্দ্ৰ চন্দ্ৰ বিশ্বাস (মুশুল্লী), অনিল চন্দ্র আচার্য (আগারগাঁও), মুজিবুর রহমান (হাওলাপাড়া), আতাউর রহমান (গায়য়া), সাধু ভূঁইয়া (কাশীনগর, রাজগাতি), খগেন্দ্র চন্দ্ৰ ভৌমিক (মহবক্ষতনগর, রাজাগতি), রিয়াজ উদ্দিন খাঁন (সিংরাইল), সরাফ উদ্দিন হোসেন (জাহাঙ্গীরপুর), ফজলুর রহমান (গয়েশপুর, গাঙ্গাইল), বাবলু (কান্দাপাড়া, গাঙ্গাইল), মহির উদ্দিন মুন্সী (রাজগাতি), ইলিয়াস উদ্দিন (মেরাকোনা), রেজাউল করিম ফরাজী (নান্দাইল) প্রমুখ।শফিকুল ইসলাম কাদির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!