নান্দিনা যুদ্ধ (গাইবান্ধা সদর)
নান্দিনা যুদ্ধ (গাইবান্ধা সদর) সংঘটিত হয় ১৮ই অক্টোবর। গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামে কোম্পানি কমান্ডার সাইফুল ইসলাম সাজা এবং গোয়েন্দা গ্রুপের প্রধান ফজলুর রহমান রাজার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় দলের সঙ্গে পাকসেনাদের এ সম্মুখ যুদ্ধে অনেক পাকসেনা হতাহত হয়। অপরপক্ষে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ১৬ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
গাইবান্ধা শহর থেকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ককে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের সাকোয়া ব্রিজ ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা এবং সাদুল্যাপুর থানার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ভাটিয়াপাড়ায় তাঁদের দুটি হাইড আউট নির্ধারিত হয়। একাধিক কোম্পানির শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এ- যুদ্ধে বিমান বাহিনীর ৮ জন এনসিও এবং এয়ারম্যানের একটি গ্রুপও অংশ নেয়। গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- কর্পোরাল রুহুল আমিন বাদশা, এলএসি ওমর ফারুক, এলএসি ইসলাম উদ্দিন, কর্পোরাল আশরাফ, কর্পোরাল আব্দুস সালাম, কর্পোরাল আব্দুল মতিন, কর্পোরাল আনোয়ার হোসেন এবং কর্পোরাল আব্দুর রশিদ। এ অপারেশনে আসার আগের দিন এ দলে দিনাজপুর জেলার ১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধাও যুক্ত হন। সকল মুক্তিযোদ্ধা দুভাগে বিভিক্ত হয়ে দুই হাইড আউটে অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ছিল একটি ২ ইঞ্চি মর্টার, ৬টি এলএমজি, ১৮টি এসএলআর, ৮টি এসএমজি, ২টি মাইন, ৩৬টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২০০ পাউন্ড বিস্ফোরক এবং বেশকিছু মার্ক ফোর ও থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল।
১৮ই অক্টোবর ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধারা যখন ঘুমে, তখন স্থানীয় দালালদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদাররা তাঁদের ঘেরাও করে। হঠাৎ আক্রান্ত হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে শত্রুসেনারা দুবার পিছু হটতে বাধ্য হয়। সে-সময় তাদের কয়েকজন হতাহত হয়। শেষে গোলন্দাজ বাহিনী পাকসেনাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এলে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়। এ পর্যায়ে আব্দুর রহমান ওরফে কানা রহমান (বোয়ালী), রফিকুল ইসলাম হীরু (বল মঝাড়) এবং দর্জি মাস্টার আব্দুল আউয়াল (কুপতলা) হানাদার বাহিনীর ঘেরাও থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ সৃষ্টির জন্য এলএমজির গুলিবর্ষণ শুরু করেন। কিছুটা পথ পেয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা পাকহানাদারদের ঘেরাও থেকে বেরিয়ে যান। দুঘণ্টা ধরে চলা এ-যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে এলাকা ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যান। অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রান্ত হয়েও এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসের সঙ্গে পাকসেনাদের মোকাবেলা করেন। এতে পাকসেনাদের বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। যুদ্ধকালে ৬ জন, পরে রাস্তায় আরো ২ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৬ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- নবীর হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, আসাদুজ্জামান নবাব, ছাবেদ আলী, আবুল কাশেম (দিনাজপুর) ও অজ্ঞাত একজন এবং ভোলার ওমর ফারুক ও ইসলাম উদ্দিন। শহীদ গ্রামবাসীরা হলেন- ফরসউদ্দিন, সেকেন্দার আলী মোল্লা, হোসেন আলী মোল্লা, আব্দুস সামাদ মোল্লা, সাদা মিয়া, খলিলুর রহমান, নাসিমউদ্দিন আকন্দ, আনসার আলী, তারা মিয়া, আব্দুল বাকী, মহেশ চন্দ্র মণ্ডল, লাল মিয়া, দুলা মিয়া, গেন্দা মিয়া, মোহাম্মদ আলী ও আবু বক্কর। [জহুরুল কাইয়ুম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড