You dont have javascript enabled! Please enable it!

নারান্দিয়া-বেজড়া গণহত্যা (মহম্মদপুর, মাগুরা)

নারান্দিয়া-বেজড়া গণহত্যা (মহম্মদপুর, মাগুরা) ২৬শে জুলাই সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ নৃশংস গণহত্যায় ৫ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ পার্শ্বে নারান্দিয়া ও বেজড়া নামে দুটি গ্রাম অবস্থিত। গ্রামদুটি নহাটা বাজার সংলগ্ন। নারান্দিয়া গ্রামে বীর প্রতীক গোলাম ইয়াকুব ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মো. নজরুল ইসলাম (নজির মিয়া)-এর বাড়ি অবস্থিত। মহম্মদপুর শালিখা অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের কেন্দ্রস্থল ছিল নহাটা। যুদ্ধের সার্বিক কর্মকাণ্ড এখান থেকে পরিচালিত হতো। তারা এ অঞ্চলে প্রতাপের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের শক্ত হাতে দমন করেন। ফলে নহাটা অঞ্চলের প্রতি হানাদার বাহিনীর ক্ষোভ ছিল বেশি। তাই মে থেকে জুলাই পর্যন্ত হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা মহম্মদপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র নহাটা বাজারে ৩-৪ বার অগ্নিসংযোগ করে এবং দোকানপাট পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে। মে মাসের শেষদিকে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের এক বৃহৎ দল নহাটা আক্রমণ করে। নহাটা স্কুলের পার্শ্বে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও সংখ্যায় কম হওয়ায় এবং গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে যান। হানাদার বাহিনী নহাটা বাজারে প্রবেশ করে এবং অধিকাংশ দোকান পুড়িয়ে দেয়। অতঃপর তারা বাজার সংলগ্ন নারান্দিয়া গ্রামে প্রবেশ করে এবং অনেক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এতে গ্রামের গোলাম ইয়াকুব ও নজির মিয়ার বাড়িসহ প্রায় ৩০-৩২টি বাড়ি পুড়ে যায়। হানাদার বাহিনীর আক্রমণে গ্রামের নিরীহ মানুষগুলো বিভিন্ন দিকে ছুটে পালানোর চেষ্টা করে। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নারান্দিয়া গ্রামের আব্দুল মালেক ছোট গলি থেকে বড় রাস্তায় উঠে আসার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তারা আমিন উদ্দিনের পিতা কালাই মোল্যাকে ধরে প্রথমে রাইফেলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে পরে গুলি করে হত্যা করে। অতঃপর মাহাবুবুর রহমান (পিতা মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন মোল্যা), বেজড়া গ্রামের আব্দুর রউফ মোল্ল্যা (পিতা ওয়াহেদ মোল্ল্যা) ও আব্দুল মাজেদ (পিতা মো. গোলাম হোসেন) পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তাদের হাত বেঁধে রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এভাবে ৫ জন নিরীহ মানুষ হানাদার বাহিনীর গণহত্যার শিকার হন। মূলত গোলাম ইয়াকুবের তৎপরতার প্রতিশোধ নিতেই পাকিস্তানি বাহিনী এ নৃশংস গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। উল্লেখ্য যে, বাজার ও গ্রাম পোড়ানোর সময় গোলাম ইয়াকুব ভারতে ছিলেন। সংবাদ পেয়ে তিনি নহাটায় ফিরে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। [সৈয়দ হাদিউজ্জামান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!