You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম নাজিম উদ্দীন

নাজিম উদ্দীন, বীর বিক্রম (১৯২০-১৯৯৮) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২০ সালে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার বেকি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রহিম উদ্দীন এবং মাতার নাম মেহেরজান বিবি। নাজিম উদ্দীন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এ যোগদান করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে নাজিম উদ্দীন হাবিলদার হিসেবে ইপিআর-এর দিনাজপুর জেলার কুঠিবাড়ি সেক্টর হেকোয়ার্টার্সে কর্মরত ছিলেন। অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে ২৮শে মার্চ নাজিম উদ্দীনসহ বাঙালি ইপিআর সেনারা বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। নাজিম উদ্দীন দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার দশমাইল ও চিরিরবন্দর উপজেলার চম্পাতলী নামক স্থানে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে অসীম সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি ভারতে যান এবং সেখানে কিছুকাল একটি মুক্তিযুদ্ধ ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
ভারত থেকে ফিরে নাজিম উদ্দীন ৬নং সেক্টরে উইং কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার, বীর উত্তমএর নেতৃত্বে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার বেশ কয়েকটি যুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার মন্ডুমালার যুদ্ধ। এখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি সুরক্ষিত ঘাঁটি। ১৬ই আগস্ট নাজিম উদ্দীন ৫০ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল নিয়ে এ ঘাঁটি আক্রমণ করেন। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়লেও দ্রুত তারা ভারী অস্ত্র নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে। এতে নাজিম উদ্দীনের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু মনোবল না হারিয়ে তিনি তাঁর সহযোদ্ধাদের সংগঠিত করে পরের দিন ভোরে পুনরায় ঐ ঘাঁটি আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে শত্রুসৈন্যদের ছোড়া একটি বোমা নাজিম উদ্দীনের ডান পায়ে লাগে। সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠিয়ে দেন। এ-যুদ্ধে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার নাজিম উদ্দীনকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নং ১৭৪, খেতাবের সনদ নং ৯৯)। মুক্তিযুদ্ধ শেষে নাজিম উদ্দীন তাঁর কর্মক্ষেত্র বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এ যোগদান করেন এবং পদোন্নতি পেয়ে নায়েব সুবেদার পদে উন্নীত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি পাঁচ কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম মোসাম্মৎ বিলাতুন নেছা। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৯৮ সালের ৮ই ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!