You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাজমূল আহসান

নাজমূল আহসান (১৯৪৯-১৯৭১) পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। ১৯৪৯ সালের ২০শে জানুয়ারি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নস্থ বরুয়াজানি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সেকান্দার আলী এবং মাতার নাম নূরজাহান বেগম। ১৯৬৫ সালে তাড়াগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এ ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি প্রকৌশল বিভাগের ৫ম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ভারতের তুরায় ট্রেনিং শেষে তিনি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে একটি কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্বভার নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
নাজমূল আহসান সীমান্ত এলাকায় পাকবাহিনীর বিওপি-র ওপর একাধিকবার আক্রমণ পরিচালনা, নালিতাবাড়ি পৌর এলাকায় দুদুয়ার খাল ব্রিজ ধ্বংস, চেল্লাখালি নদীর ফেরি ধ্বংস, তন্তর যুদ্ধ ইত্যাদি অপারেশনে নেতৃত্ব দান করেন এবং অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। ৫ই জুলাই শেরপুর জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ি কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংসের এক সফল অভিযান পরিচালনা করেন। এরপর তাঁর কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নিকটস্থ বিলের মধ্যে অবস্থিত রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে অবস্থান নেন। তাঁদের অবস্থান সম্বন্ধে ঐ গ্রামের পাকবাহিনীর দুই গোপন সংবাদদাতা জালাল মিস্ত্রি ও হক আলী শেরপুর জেলা সদর ক্যাম্পে পাকসেনাদের খবর দেয়। পাকিস্তানি বাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে ৬ই জুলাই অতর্কিতে ঐ গ্রামে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালালে নাজমূল আহসানসহ তিনজন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে শহীদ হন। অপর দুজন হলেন মোজাম্মেল হোসেন ও আলী হোসেন। গ্রামের কয়েকজন নিরীহ মানুষও হানাদারদের গুলিতে শহীদ হন। শহীদ নাজমূল আহসানকে নালিতাবাড়ির তাড়াগঞ্জের দক্ষিণ বাজার শাহী জামে মসজিদ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
নাজমূল আহসানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে নালিতাবাড়ি উপজেলা সদরে ‘নাজমূল স্মৃতি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন সেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শহীদ নাজমূল আহসান হল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। [হারুন-অর-রশিদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!