You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.01 | নাজিরপুর গণহত্যা (পাবনা সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

নাজিরপুর গণহত্যা (পাবনা সদর)

নাজিরপুর গণহত্যা (পাবনা সদর) সংঘটিত হয় ১লা ডিসেম্বর। দুটি রাজাকার ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে তা ধ্বংস করে দিলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা নাজিরপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত করে। তারা অসংখ্য সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চলায়। বাড়িঘরে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
২৭শে নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রীকৃষ্টপুর ও ১০ই নভেম্বর তিনগাছার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে ছত্রভঙ্গ করে দেন। এতে মহরম ও ছানা শহীদ হন। অন্যদিকে রাজাকাররা সবাই নিহত হয়। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে হানাদাররা নাজিরপুর গ্রামে গণহত্যা চালায়। ১লা ডিসেম্বর ভোর না হতেই পাকসেনারা গ্রামটি ঘিরে ফেলে এবং ঘরে- ঘরে তল্লাশি চালিয়ে পুরুষদের আটক করে। অন্যদিকে র বাড়িঘরে লুটতরাজ ও আগুন দেয়ার পাশাপাশি তারা নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এ নির্যাতনের শিকার হন মা, নবপরিণীতা এবং যুবতী নারী। কোনো- কোনো নারী একাধিক পাকসেনা কর্তৃক লাঞ্চিত হন। পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত হেমায়েতপুর ইউনিয়নের এ গ্রামের মধ্য দিয়ে চলে গেছে পাবনা-পাকশি রাস্তা। এ রাস্তার পাশেই একটি বড় খালের কাছে আটককৃত প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে বা লাইনে দাঁড় করিয়ে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় গুলি করে, গলা কেটে এবং বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করে। শুধু তাই 3 নয়, সেদিন পাকসেনা ও রাজাকাররা ৭ জন যুবককে ঘরে বন্দি করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। তাদের মধ্যে ছিলেন- আহম্মদ, হিরাই, ছলিম, সোহরাব প্রমুখ।
পাকসেনাদের নৃশংসতার এখানেই শেষ নয়। মসজিদে ফজরের নামাজ আদায়রত অবস্থায় তারা লোকমান, রটু, খবির উদ্দীনসহ ৮ জনকে ধানক্ষেতে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এরপর রাজাকাররা জানতে পারে নাজিরপুর ও এর র পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছে। এ- সময় রাজাকারের দল চর সানিকদিয়াড়, তিনগাছা বাগান, . শ্রীকৃষ্ণপুর ও এর আশপাশের কয়েটি স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে ঘরে-ঘরে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজনদের গলা কেটে হত্যা করে। তারা চর গফুরাবাদ ও চর প্রতাপপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর হামলা চালালে মাস্টার সাহেদ ও আফতাব শহীদ হন। এছাড়াও তারা গ্রামের নিরীহ জনসাধাণের ওপর হামলা চালিয়ে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। একই সঙ্গে তারা গ্রামের শতশত বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। [মো. হাবিবুল্লাহ্]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড