You dont have javascript enabled! Please enable it!

নহাটা যুদ্ধ (মহম্মদপুর, মাগুরা)

নহাটা যুদ্ধ (মহম্মদপুর, মাগুরা) ২১শে আগস্ট সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াভয় এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন মেজর ও একজন ক্যাপ্টেনসহ প্রায় এক কোম্পানি সৈন্য নিহত হয়। তাদের ৪টি ৩০৩ চাইনিজ রাইফেল, ২টি ওয়ারলেস সেট, ১টি ৭৬২ চাইনিজ রাইফেলসহ প্রায় ২০০ রাউণ্ড গুলি ও প্রচুর গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য মুন্সি নূরুল হক শহীদ হন।
মাগুরা জেলার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র ও মহম্মদপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন নহাটা বা নহাটা গ্রাম। নহাটাকে কেন্দ্র করে উপজেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতিপর্ব, প্রতিরোধ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। ২৫শে মার্চ ঢাকার গণহত্যার খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে আনসার কমান্ডার গোলাম ইয়াকুব, বীর প্রতীক- এবং পুলিশের এএসআই কাজী নূর মোস্তফা (জামাই) নহাটা অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলেন। মে মাসের শেষদিকে হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা নহাটা আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিআক্রমণে ৪ জন রাজাকার নিহত হয়। হানাদার বাহিনী নবগঙ্গা নদী পার হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এ- সময় তাদের গুলিতে দরিশালধার পাচু মাঝি নদীতে নৌকার ওপর গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তিনিই মুক্তিযুদ্ধে নহাটা অঞ্চলের প্রথম শহীদ। একদিন পর পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা পুনরায় নহাটা আক্রমণ করে। কাজী নূর মোস্তফার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও সংখ্যায় কম হওয়ায় ও গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা কৌশলে পিছু হটেন। হানাদার বাহিনী নহাটা বাজারে প্রবেশ করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। ২১শে আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনীর এক কোম্পানি সৈন্য ও রাজাকাররা সম্মিলিতভাবে নহাটা আক্রমণ করে। তারা বাজারে অগ্নিসংযোগ করে দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে উভয় পক্ষের মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হানাদার বাহিনী নহাটা গোরস্থান এবং মুক্তিযোদ্ধারা নহাটা মডেল স্কুল (প্রাইমারি স্কুল) মাঠে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর মেজর মোশারফ হোসেন এবং একজন ক্যাপ্টেনসহ প্রায় এক কোম্পানি সৈন্য নিহত হয়। ৪ জন রাজাকার গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ে। মডেল স্কুলের দক্ষিণ পার্শ্বে নহাটার গোলাম রব্বানীর অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী মহিরন নেছা গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। এ-সময় হানাদার বাহিনীর গুলিতে পুলিশ সদস্য মুন্সি নূরুল হক শহীদ হন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা প্রচণ্ড যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন গোলাম ইয়াকুব ও কাজী নূর মোস্তফা।
হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরা পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ২২শে আগস্ট পুনরায় নহাটা বাজারের বিপরীতে নবগঙ্গা নদীর অপর প্রান্তে বাটাজোড় ঘাটে কামান ও মেশিনগানসহ অবস্থান নেয়। এ-সময় আগের দিনের যুদ্ধ জয়ের সংবাদ শুনে নহাটা বাজারে প্রচুর জনসমাগম হয়। গোলাম ইয়াকুব মানুষের জীবনের কথা ভেবে পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি বাজার থেকে উত্তর দিকে কিছুটা দূরে অবস্থান নেন এবং গুলিবর্ষণ করেন। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী বিভ্রান্ত হয়ে ঐদিকে কামানের গোলা নিক্ষেপ করে। এ সুযোগে বাজারের মানুষ নিরপদ স্থানে আশ্রয়ে নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে পাকিস্তানি বাহিনী নদী পার হতে না পেরে মাগুরায় ফিরে যায়। [সৈয়দ হাদিউজ্জামান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!