নাওডাঙ্গা ফিল্ড হাসপাতাল (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম)
নাওডাঙ্গা ফিল্ড হাসপাতাল (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম) কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা হাইস্কুলে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ হাসপাতাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হতো। বহু মুক্তিযোদ্ধা এখান থেকে চিকিৎসা লাভ করেন।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানা মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তাঞ্চল ছিল। এখানে কুড়িগ্রাম মহকুমা আওয়ামী লীগ- সভাপতি আহম্মদ হোসেন সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন এমপিএ, ছাত্রলীগ সভাপতি শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বদরুজ্জামান মিয়া, ইউনুছ আলী মিয়া, তাছাদ্দুক হোসেন প্রমুখের নেতৃত্বে সিভিল প্রশাসন পরিচালিত হতো। এছাড়া লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম সদরের বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা এখানে থেকে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও যুদ্ধ পরিচালনা সংক্রান্ত কাজ তদারকি করতেন। মাঠ পর্যায়ের অপারেশনে প্রতিদিন হতাহতের ঘটনা ঘটত। যুদ্ধে আহতদের সেবার জন্য ফুলবাড়ীর নাওডাঙ্গা হাইস্কুলে একটি ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়। মণিকৃষ্ণ সেন, ডা. কালীপদ বর্মণ, শংকর বসু, শামসুল হক, চিত্তরঞ্জন দেব প্রমুখ এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন কয়েকজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- আকলিমা খন্দকার, মাহমুদা ইয়াসমীন বিউটি, কনকপ্রভা সরকার, জাহানারা বেগম, শামীমা আখতার গিনি, পিয়ারী, মমতাজ পারভীন প্রমুখ। হাসপাতালে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, কালীগঞ্জ, মোগলহাট, হাতীবান্ধা ইত্যাদি স্থানে যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা দেয়া হতো। যাঁদের অবস্থা খারাপ ছিল তাঁদের এখান থেকে ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হতো। এ হাসপাতালের নারী মুক্তিযোদ্ধারা বালাহাট যুবশিবিরে সশস্ত্র প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। তাঁরা অস্ত্র পরিচালনা করতে পারতেন। এ ফিল্ড হাসপাতালটি বামপন্থী সংগঠন ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়ন শুরু করলেও ছাত্রলীগ নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুছ আলী, আমীর আলী, শামসুল হক সরকার, আহাম্মদ হোসেন সরকার প্রমুখের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রকৃত চিকিৎসা সেবাপ্রদান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এটি ছিল কুড়িগ্রাম জেলার মাঠ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত একমাত্র হাসপাতাল। [আব্দুল খালেক ফারুক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড