You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে নাটোর সদর উপজেলা - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে নাটোর সদর উপজেলা

নাটোর সদর উপজেলা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নাটোর সদর থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শংকর গোবিন্দ চৌধুরী এমপিএ নির্বাচিত হন। ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা ৭০-এর নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী বাঙালিদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। এমতাবস্থায় ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথমদিকে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলন এর ডাক দেন। সে আন্দোলনে নাটোর শহরের সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ৩রা মার্চ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ নাটোর রিক্রিয়েশন ক্লাবে একটি টেলিফোন অফিস স্থাপন করে ঢাকার আন্দোলন-সংগ্রামের খবরাখবর সংগ্রহ করতে থাকেন। এটি ছিল একটি যোগাযোগ কেন্দ্র। নেতৃবৃন্দ পালাক্রমে এখানে অবস্থান করেন এবং দিনরাত সভা করে তাৎক্ষণিক ঘটে যাওয়া ঘটনা মোকাবেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শহরে প্রতিদিন মিটিং- মিছিল চলতে থাকে। গঠিত হয় সংগ্রাম কমিটি, কোথাও জয়বাংলা পরিষদ। রিক্রিয়েশন ক্লাবে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক পাহারা দিতে থাকেন। টেলিযোগাযোগের ফলে নাটোর থেকে সারা বাংলাদেশের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হয়। এই টেলিফোন অফিসের মাধ্যমেই নাটোরে প্রথম ঢাকার <অপারেশন সার্চলাইট-এর খবর আসে। আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার তথ্যও এর মাধ্যমেই পাওয়া যায়। এরপরই নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজ মাঠ ও রাণী ভবানী কলেজ মাঠে অবসরপ্রাপ্ত ও ছুটিতে আসা বাঙালি সেনা, ইপিআর ও আনসার সদস্যদের পরিচালনায় উৎসাহী ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের পিএনসিসি (পাকিস্তান ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর)-র ডামি রাইফেল দিয়ে তাদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ উৎসাহী যুবকদের দ্বারা পাড়ায়-মহল্লায় পাহারার ব্যবস্থা করেন। ঐসব যুবক নিজ- নিজ মহল্লায় অন্যদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে উজ্জীবিত করে। নাটোর মহকুমার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক কামাল হোসেন ও পুলিশ প্রশাসনসহ মহকুমা খাদ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (অব.) হাবিবুর রহমান এবং জেলার নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা এক বৈঠকে বসে যুব সমাজকে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ রক্ষা করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তাসৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানান। সংগ্রাম কমিটির সিদ্ধান্তসমূহ প্রায় প্রতিদিন সদরের বিভিন্ন মোড়, স্কুলমাঠ ও সিনেমা হলের পাশে জনসভা করে জানিয়ে দেয়া হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে শহরের মোড়ে লাঠিসোটা নিয়ে দিনরাত পাহারা দেয়। শহরের সরকারি টেলিফোন- টেলিগ্রাফ অফিস অবরুদ্ধ করে রাখে। ঢাকা থেকে কোনো ফোন বা টেলিগ্রাম এলে বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা দ্রুত নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর নাটোর শহরবাসী গুরুত্বপূর্ণ সব অফিস-আদালত বন্ধ করে দেয়। নাটোর সদর থানার আগদিঘা প্রাইমারি স্কুলমাঠ ও শংকর গোবিন্দ চৌধুরী এমপিএ-এর বাড়ির আঙিনায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়। নাটোর সদর থানায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইপিআর সদস্য হাবিবুর রহমান (জামহুরিয়া ইউনিয়ন), আবদুস সামাদ (কাটুয়াবাড়ি), আব্দুস সবুর খান (পুলিশ সদস্য), আনসার কমান্ডার মোজাম্মেল হোসেন, বাবর আলী (পিপরুল ইউনিয়ন), ইউসুফ আলী, মেহের আলী, জামসেদ আলী প্রমুখ। উপর্যুক্ত নেতৃবৃন্দ নাটোর সদর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন এবং কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন মোকছেদ আলী (পিতা জোনাব আলী, আগদিঘা) ও আলেক উদ্দিন প্রামাণিক (পিতা ফজের আলী, ছাতনি দিয়ারপাড়া)।
২১শে মার্চ নাটোর শহরের রেলওয়ে স্টেশন এলাকার অবাঙালি ও বিহারিরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রস্তুতি নেয়। মহকুমা প্রশাসক এ খবর পেয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সেখানে পাঠালে অবাঙালিরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। কিন্তু বাঙালি যুবকরা তাদের পরাস্ত করে অস্ত্র কেড়ে নেয় এবং আলাইপুরের কয়েকটি বাড়িতে আটকে রাখে। অন্যদিকে অবাঙালি নারীদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রতিরোধকারী যুবকরা দিনরাত পাহারা দেয়। ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটতে পারেনি।
২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকেই নাটোর সদর থানার মানুষ পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে ঢাকা-নাটোর সড়কে গর্ত খুঁড়ে, গাছ ফেলে, কোথাও-কোথাও বিটুমিন-আলকাতরার ড্রাম ও টায়ারে আগুন দিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। নাটোর দখলের পূর্বে পাকবাহিনী ১৩ই এপ্রিল আহম্মদপুরে নন্দকুজা নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজে অবসরপ্রাপ্ত ইপিআর, আনসার সদস্য ও সাধারণ জনতার প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। প্রতিরোধকারীদের গুলির আঘাতে পাকবাহিনীর একটি রসদবাহী গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাঁচজন পাকসেনা আহত হলে সেদিন পাকবাহিনী পিছু হটে। দুজন প্রতিরোধকারী আহত হন। ১৪ই এপ্রিল নাটোর সদরের দত্তপাড়ার নারদ নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের নিকট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে প্রতিরোধ করে। প্রতিরোধকারীদের মধ্যে মোকরামপুরের গুরুদাস তরফদার, দীনেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, শেখ আবুল হোসেন, পিপরুল ইউনিয়নের অছিম উদ্দিন, প্রশিক্ষক ও আনসার কমান্ডার বাবর আলী, আফাজ উদ্দিন, আব্দুস সামাদ দেওয়ান, কাজী মোতাহার হোসেন, মহসিন আলী, হোসেন আলী, আসজার আলী, আশরাফ আলী, বিনয় দেবনাথ, আব্দুর রহমান সেলিম, গোলাম রব্বানী রঞ্জু, আমিরুল ইসলাম বাবুল প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। সেদিনের প্রতিরোধযুদ্ধে পাকবাহিনীর গুলিতে কানাইখালীর আসজার আলী ও তাঁর পুত্র মহসিন শহীদ হন। পাকবাহিনী প্রতিরোধ ভেঙ্গে নাটোর শহরে প্রবেশ করে এবং নাটোর থানা, নবাব সিরাজ-উদ- দৌলা কলেজ ও দিঘাপতিয়ার জমিদার বাড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তীতে আহম্মদপুর ব্রিজের উত্তর পাশে এবং রোডস এন্ড হাইওয়ের পুরাতন ভবনে রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপন করে।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকেই নাটোর সদরে পাকবাহিনীর সহযোগী শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের মধ্যে নাটোর শহরের কাচু উদ্দিন মোক্তার (আইনজীবী), হাফেজ আবদুর রহমান (জামহুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ), নাছির উদ্দিন তালুকদার, শের মাহমুদ (রাজাকার ও অবাঙালি মাদ্রাসা শিক্ষক), আবদুস সাত্তার খান চৌধুরী, খোরশেদ খান চৌধুরী, আবদুস সালাম খান চৌধুরী, বিপ্রহালসার মিয়ার উদ্দিন, কছিমউদ্দিন (পোস্টমাস্টার), মানিক খাঁ, গিয়াস উদ্দিন (রায় হালসা), খাদেমুল ইসলাম (রাজাকার কমান্ডার, চকপাড়া), সাজদার আলী মাস্টার (ভাবনি; কুখ্যাত দালাল)- এর নাম উল্লেখযোগ্য।
৫ই এপ্রিল তেবাড়িয়া গ্রামে পাকবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে বোমা ফেললে মহসিন আলী, হায়াত আলী, শৈলেশ কুমার, বিজয় সরকার ও হারান মণ্ডল নামে পাঁচজন গ্রামবাসী শহীদ হন। এছাড়া হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষিপ্ত শেলে অসংখ্য মানুষ আহত এবং অনেক দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৬ই এপ্রিল পাকবাহিনীর বিমান নাটোর শহরের ওপর দিয়ে কয়েকবার চক্কর দিয়ে বোমাবর্ষণ করে ঢাকার দিকে ফিরে যায়। বোমার আঘাতে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ২৫ জন মানুষ আহত হন। পার্শ্ববর্তী হালসা গ্রামে বিমান থেকে বোমা বর্ষিত হয়। বোমার আঘাতে সেখানে অক্ষয় সরকার ও বিনয় মণ্ডল নামে দুজন গ্রামবাসী শহীদ হন।
১৪ই এপ্রিল পাকবাহিনী নাটোর শহরে প্রবেশ করলে জামহুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধীরা পাকিস্তানি পতাকা উড়িয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানায়। শহরে প্রবেশ করেই পাকবাহিনী মোস্তাক হোসেন উলফাত ও অধীর ঘোষকে হত্যা করে। উলফাত ছিলেন একজন সাহসী যুবক ও ভালো সংগঠক। এরপর নাটোর সদর হাসপাতালের ডাক্তার হেম চন্দ্র বসাক (বলাই ডাক্তার), নাট্যকর্মী মন্মথ প্রামাণিক, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন- নেতা মাহবুব আলী, ভাদু, হারান, গোপাল, শামসুল হুদা হ্যাপি, অবিনাশ, আতাউর রহমান আতা, মুকুন্দলাল চৌধুরী, ডাক্তার রেবতী সান্যাল প্রমুখ পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হত্যার শিকার হন। হ্যাপি, অবিনাশ ও আতাকে নারদ নদের তীরে নির্মিত লিয়াকত ব্রিজের কাছে ধরে নিয়ে বাঙালি দালালরা শিরশ্ছেদ করে হত্যা করে। একই দিন নাটোর মহকুমার খাদ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (অব.) হাবিবুর রহমানসহ ৪০ জনকে মোহনপুর এলাকায় ধরে নিয়ে হত্যা করে একটি গর্তে পুঁতে রাখে। এ ঘটনা মোহনপুর গণহত্যা নামে পরিচিত। ১৬ই এপ্রিল নাটোর শহরের জীবনকৃষ্ণ মানি নামে নাটোর সদর হাসপাতালে কর্মরত এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। ঐদিন চৌকিরপাড়ে নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রের অফিস পিয়ন হাফিজুর রহমানকেও হত্যা করে। ১৯শে এপ্রিল পাকবাহিনী চৌকিরপাড় হিন্দুপাড়ায় অভিযান চালালে ১৯ জন গ্রামবাসী গণহত্যার শিকার হন। ৩রা মে পাকবাহিনী শান্তি কমিটির দালালদের সহযোগিতায় নলডাঙ্গা ও গোকুলনগর থেকে ৩০ জন নিরীহ মানুষকে ধরে দত্তপাড়ায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশগুলো মাটিচাপা দেয়। এ-দুটি ঘটনা চৌকিরপাড় গণহত্যা ও দত্তপাড়া গণহত্যা নামে পরিচিত।
৩রা জুন ভোরে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা ছাতনি ও ভাবনি গ্রাম ঘিরে ফেলে। তারা বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে ৭৮ জন গ্রামবাসীকে একই স্থানে জড়ো করে রশি দিয়ে বাঁধে এবং নাটোর-তাহেরপুর সড়কের পাশে ছাতনি সুইস গেটে নিয়ে যায়। প্রথমে তাদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় যারা বেঁচে ছিলেন তাদের জামহুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ আব্দুর রহমান ও তার সহযোগীরা জবাই করে হত্যা করে। এ ঘটনা ছাতনি সুইস গেট গণহত্যা নামে পরিচিত।
১৮ই জুন রাজাকাররা চকপাড়া গ্রামের চারজনকে নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করে। একই গ্রামে আশ্রয় নেয়া আরো ৩০ জনকে হত্যা করে একটি কূপের মধ্যে ফেলে দেয়। এ ঘটনা চকপাড়া গণহত্যা নামে পরিচিত। রাজাকাররা এদিন কয়েকজন নারীর সম্ভ্রমহানি করে। ৪ঠা ডিসেম্বর চকপাড়া গ্রামের রাজাকার কমান্ডার খাদেমুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা বিপ্রবেলঘড়িয়া গ্রামের চারজন গ্রামবাসীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করে। নাটোর সদর উপজেলায় দুটি বধ্যভূমি ও পাঁচটি গণকবর আছে। সেগুলো হলো- নারদ নদীতীর বধ্যভূমি, নন্দকুজা নদীতীর বধ্যভূমি-, মোহনপুর গণকবর, চৌকিরপাড় গণকবর, দত্তপাড়া গণকবর, চকপাড়া কূপ গণকবর এবং নাটোর সদর উপজেলা কার্যালয় সংলগ্ন গণকবর। ১৮ই ডিসেম্বর নাটোর সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
অপরদিকে, ২১শে ডিসেম্বর নাটোর গ্যারিসনের পাকিস্তানি সেনাদের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ১৬৫ মাউন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবির সিং পান্নুর নিকট সকল ইউনিট নিয়ে নিঃশর্ত সারেন্ডার করে।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হলেন- মো. সোলায়মান, বীর প্রতীক (পিতা মো. আব্দুল হাই মিয়া, কাপুড়িয়াপট্টি)। নাটোর সদর উপজেলায় তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন— আবদুর রহমান ওরফে সেলিম চৌধুরী (পিতা ইসহাক চৌধুরী, কানাইখালী), গোলাম রব্বানী রঞ্জু (পিতা আবদুর রশিদ, কানাইখালী) এবং মজিবর রহমান রেজা (পিতা আব্দুর রহমান, পাটুয়াপাড়া)।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত এমপিএ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর নামে নাটোর সদরে একটি চত্বর ও নাটোর স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়। ছাতনি সুইস গেইট গণহত্যায় শহীদ ও জামহুরিয়া মাদ্রাসা মোড়ে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। এছাড়া, ১৪ই এপ্রিল পাকবাহিনীর হাতে শহীদ নাট্যকর্মী মন্মথ প্রামাণিকের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য স্বাধীনতার পর সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদ্যোগে ‘সাকাম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। [মতিউর রহমান মর্তুজা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড