নর্থ খুলনা মুক্তিবাহিনী (তেরখাদা, খুলনা)
নর্থ খুলনা মুক্তিবাহিনী (তেরখাদা, খুলনা) মুক্তিযুদ্ধকালে তেরখাদায় ‘নর্থ খুলনা মুক্তিবাহিনী’ নামে একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়। এ বাহিনী মূলত তেরখাদায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। এ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন ফোহাম উদ্দিন। ডাক্তার মুনসুর আলী এমপিএ-র নির্দেশনা ও ক্যাপ্টেন ফোহাম উদ্দিনের নেতৃত্বে ৮ই মার্চ তেরখাদায় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। সংগ্রাম পরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে মূলত তেরখাদায় মুক্তিবাহিনী তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ডাক্তার মুনসুর আলী এমপিএ এসপি আব্দুর রকিব খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বাহিনীকে ৭০টি রাইফেল ও প্রায় ৪ হাজার গুলি সংগ্রহ করে দেন। ২৬শে মার্চ তেরখাদা থানার বেশকিছু রাইফেল ও গুলি থানার ওসি নিরঞ্জনের সহায়তায় এ বাহিনীর হাতে আসে।
এপ্রিল মাসে দিঘলিয়ার গাজীর হাটে আব্দুল জলিল এবং মোল্লা জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে সংগঠিত শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা এ বাহিনীতে যোগ দেন। গোপালগঞ্জের ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ, জোনাব আলী এবং অপর এক আনসার কমান্ডার রাইফেল ও গুলি নিয়ে তেরখাদা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেন। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার প্রয়োজন অনুভব করেন। ৮ই জুলাই গ্রেনেড ও টমিগান নিয়ে আটলিয়ার মুহাম্মদ ৬ জন সঙ্গীসহ এ বাহিনীতে যোগ দেন। মুহাম্মদ লষ্করপুর থেকে ১৩টি গ্রেনেড এ বাহিনীকে এনে দেন। ১২ই জুলাই থেকে ‘তেরখাদা মুক্তিবাহিনী’ নামটি পরিবর্তন করে “নর্থ খুলনা মুক্তিবাহিনী’ নামে যাত্রা শুরু। এ বাহিনীর সদস্যরা ডাক্তার মুনসুর আলী এবং ক্যাপ্টেন ফোহাম উদ্দিনের কাছে নতুন করে শপথ গ্রহণ করেন। ১৪ই জুলাই রামু দারোগা, ১৫ই জুলাই পোতলা বাজারের ডাকাত সিরাজ, ১৬ই জুলাই আকরাম নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের কাছ থেকে ৪টি অস্ত্র সংগ্রহ করে এ বাহিনী। ২০শে জুলাই মুসলিম লীগ সদস্য চরকুলিয়া গ্রামের ফজলু মোক্তারের কাছ থেকে একটি বন্দুক, শরমপুরের শাহাবুদ্দিন মেম্বরের কাছ থেকে একটি বন্দুক, চরকুলিয়া ফজলু মোক্তারেরর কাছ থেকে একটি রিভলবার এবং কুশলা গ্রামের আবু তালেবের কাছ থেকে একটি বন্দুক সংগ্রহ করে এ বাহিনী।
২৮শে জুলাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য বারাসাতের মোশারফ মিয়া, সোহরাব ও মহম্মদ চাকরি ছেড়ে এ বাহিনীতে যোগদান করেন। তাঁরা অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ভারতে যান। ডাক্তার মুনসুর আলী এবং বোরহান উদ্দিন নর্থ খুলনা মুক্তিবাহিনীর স্বীকৃতি আনার জন্য স্বাধীন বাংলার রাজধানী মুজিবনগর যাত্রা করেন।
তেরখাদার রাজাকার মহসিন মাওলানা এ-সময় এক ঘৃণ্য ফতোয়া জারি করে- “হিন্দুর মালামাল লুট করে নেয়া যায় এবং হিন্দুদের মেয়েদের বাদী হিসেবে রেখে তাকে স্ত্রীর মতো ব্যবহার করা যায়। যদি বাঁচতে চাও, সব হিন্দু মুসলমান হয়ে যাও।’ অপ্রতিরোধ্য এ রাজাকার মহসিন মাওলানাকে ১৬ই জুন এ বাহিনী হত্যা করে। ১লা জুলাই এ বাহিনীর সদস্যরা হিন্দুদের ওপর অত্যাচার ও লুণ্ঠনকারী সোহরাব রাজাকারকে হত্যা করে। ৯ই জুলাই হিন্দুদের মালামাল লুট এবং একটি হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করার অপরাধে শেখপুরার ছিয়ামকে তাঁরা হত্যা করেন। ৫ই আগস্ট, ২৮শে আগস্ট এবং ২রা ডিসেম্বর এ বাহিনী কাটেংগা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে। ১১ই আগস্ট এ বাহিনী মোল্লাহাট রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে। এছাড়া খুলনা শহর দখল অভিযানে এ বাহিনী ভূমিকা রাখে। [মো. আলতাফ হোসেন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড