নরুন্দি রেলস্টেশন যুদ্ধ (জামালপুর সদর)
নরুন্দি রেলস্টেশন যুদ্ধ (জামালপুর সদর) সংঘটিত হয় ২৫শে জুন। এতে অনেক রাজাকার আহত হয় এবং এক পর্যায়ে সকলে আত্মসমর্পণ করে।
জামালপুর রেলস্টেশন থেকে নরুন্দি রেলস্টেশনের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সৈন্য ও সমরাস্ত্র বহনে রেলপথকেই পাকবাহিনী বড় অবলম্বন করেছিল। কারণ বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট থেকে দেশের সব জায়গায় তখন যাতায়াত সহজ ছিল না। অধিকাংশ সড়ক পথ ছিল সরু ও কাঁচা। তাই মুক্তিযুদ্ধের সময় দখলদার পাকবাহিনীকে পর্যুদস্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা রেলপথে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। তাঁরা এবং সাধারণ মানুষ বহু রাস্তা কেটে রেললাইন উৎপাটন ও ব্রিজ ধ্বংস করে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।
নরুন্দি রেলস্টেশনে রেঞ্জার্স ও রাজাকার বাহিনী নিযুক্ত ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর যাতায়াত বিঘ্নিত করার জন্য রেলস্টেশনটি উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ উদ্দেশ্যে নায়েক মোহাম্মদ ফরহাদের নেতৃত্বে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দলকে ৩টি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। গ্রুপ তিনটির নেতৃত্বে ছিলেন জবেদ আলী, ইলিয়াস চৌধুরী ও ড. বাবর আলী। জুনের শেষ সপ্তাহে দলটি জামালপুরে পৌঁছে। পাকবাহিনীর সম্ভাব্য অবস্থান যাচাই করে তাঁরা বুঝতে পারেন অল্প অস্ত্র ও লোকবল নিয়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সম্ভব হবে না। তবে সব অপারেশনে শত্রুকে পরাভূত করা না গেলেও অতর্কিতে হামলা চালিয়ে যেতে হবে। এতে শত্রুপক্ষ তটস্থ থাকবে এবং প্রতিরোধের জন্য অস্ত্র ও গোলা- বারুদ পাহারা দিতে-দিতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়বে।
২৫শে জুন নরুন্দি রেলস্টেশনের উত্তর দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান। স্টেশনে অবস্থানরত রাজাকাররাও পাল্টা গুলি চালায়। এ-যুদ্ধে অনেক রাজাকার আহত হয় এবং এক পর্যায়ে সকলে আত্মসমর্পণ করে। রাজাকারদের নিরস্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়ার শপথ করিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা নরুন্দি রেলস্টেশনের বিভিন্ন স্থাপনায় বিস্ফোরক ব্যবহার করেন। এতে স্টেশনের রেললাইন, সিগনাল ইত্যাদি খণ্ডবিখণ্ড হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে। এ রেলস্টেশনের মাইল দুয়েকের মধ্যে অবস্থিত কোচনধরা রেলওয়ে ব্রিজটি পাহারা দিত নিকটস্থ ক্যাম্পের পাকবাহিনীর সদস্যরা। নরুন্দির হাজীপাড়া নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা <রাইচউদ্দিন, বীর প্রতীকএর নেতৃত্বে ১১ই আগস্ট রাত ৪টার দিকে গ্রেনেড ও বিস্ফোরক দিয়ে ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়া হয়। ৬০ জনের মতো মুক্তিযোদ্ধা এতে অংশ নেন। রাতের শেষ প্রহরে এটি ছিল এক দুঃসাহসিক অপারেশন। ময়মনসিংহ ও ঢাকায় পাকবাহিনীর ঘাঁটিতে নরুন্দি অপারেশনের খবর পৌঁছে গেলে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। [শাহ খায়রুল বাশার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড