You dont have javascript enabled! Please enable it!

নবীগঞ্জ বাজার গণহত্যা (নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ)

নবীগঞ্জ বাজার গণহত্যা (নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৫ই আগস্ট দুপুরবেলা। নবীগঞ্জ বাজার সাপ্তাহিক হাটের দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় ২২ জন মানুষ শহীদ হন।
বানিয়াচং থানা সদর থেকে মকার হাওরের পাশ দিয়ে বড়- বড় কয়েকটি নৌকায় করে এক দল পাকিস্তানি সৈন্য স্থানীয় কয়েকজন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে নবীগঞ্জ বাজারের উদ্দেশে রওনা করে। রাজাকারদের দেখানো পথে প্রথমে তারা গুজাখাইর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বিধু বাবুর বাড়িতে এসে তাঁকে না পেয়ে নবীগঞ্জ বাজারের দিকে চলে আসে। পথিমধ্যে গোয়াল বাড়ি খালের মুখে একটি নৌকা ভিড়িয়ে কয়েক জন পাকিস্তানি সৈন্য গয়াহরির মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব দাশের খোঁজে তার বাড়ির উদ্দেশে অগ্রসর হয়। নৌকা থেকে নেমে প্রথমে তারা উমাচরণ দাশকে পেয়ে তাঁকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে এরপর বাসুদেব কুমার দাশের বাড়িতে প্রবেশ করে তাঁকে না পেয়ে তার ভাই বীরেন্দ্র কুমার দাশ (বীরু দাশ)-কে তারা গুলি করে হত্যা করে। আঙ্গিনায় বসা অবস্থায় তাঁর বৃদ্ধ মাতা মহামায়া দাশকে গুলি করলে তিনিও সঙ্গে-সঙ্গে প্রাণ হারান। গয়াহরি থেকে হানাদার বাহিনীর অগ্রবর্তী বড় দলটি শাখা বরাক নদী দিয়ে বিকেল ৩টার দিকে নবীগঞ্জ বাজারে প্রবেশ করে। ঘাটে পাকবাহিনীর নৌকা দেখেই বাজারের লোকজন প্রাণ ভয়ে যে যেভাবে পারে ছুটতে শুরু করে। হানাদাররা দ্রুত নৌকা থেকে নেমে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে বাজার জনশূন্য হয়ে যায়। অনেকে আহতাবস্থায় শত্রুসেনাদের বেষ্টনীতে আটকা পড়েন। অনেককে তারা নিজ-নিজ দোকান থেকে ধরে নেয় ৷ সবাইকে শাখা বরাক নদীর তীরবর্তী পুরাতন থানা ভবনের সামনে এনে এক সারিতে দাঁড় করায়। সারির সম্মুখে স্থাপিত আগ্নেয়াস্ত্র অকস্মাৎ গর্জে উঠলে নিরীহ সাধারণ মানুষগুলো মুহূর্তে লুটিয়ে পড়েন। হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি তারা ধর্মীয় উপাসনালয় আখড়া বাড়ি ও নবীগঞ্জ রথে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সঙ্গে তারা বাজারে লুণ্ঠন চালায় এবং নারীধর্ষণ করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নবীগঞ্জ বাজার গণহত্যায় ২২ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
হত্যার পর হানাদার বাহিনী রাজাকার ও স্থানীয় কয়েকজনকে দিয়ে থানার সামনে এক স্থানে গর্ত করে (বর্তমান ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পেছনে) লাশগুলোকে গণকবরে সমাহিত করে। এ গণহত্যায় শহীদ ১০ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- সাবাজ মিয়া (৬৫) (নবীগঞ্জ বাজার; কৃষক; স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আব্দুল জব্বারের পিতা), সুরেশ চৌধুরী (৪০) (নবীগঞ্জ বাজার; পূজারি), রাজকুমার বণিক (৬৯) (নবীগঞ্জ বাজার; ব্যবসায়ী), শৈলেন্দ্র চন্দ্র বণিক (৫৫) (নবীগঞ্জ বাজার; ব্যবসায়ী), গজেন্দ্র দেব (৭০) (নবীগঞ্জ বাজার; ব্যবসায়ী), উপেন্দ্র দেব (৬৩) (কেলি কানাইপুর; শ্রমিক), রাইমোহন শীল (৫৯) (কেলি কানাইপুর; ব্যবসায়ী), গোবিন্দ শীল (২১) (কেলি কানাইপুর, ব্যবসায়ী), কালি নমঃশূদ্র (৬৭) (রায়া নগর; শিক্ষক) ও পিয়ারি মোহন পাল (৫৭) (হালিতলা; ব্যবসায়ী)। ১৯৯৯ সালের শেষদিকে নবীগঞ্জ পৌরসভার পক্ষ থেকে গণকবরের স্থানটিতে ‘নবীগঞ্জ গণকবর স্মৃতিসৌধ’ নামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!