You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.24 | নন্দনপুর যুদ্ধ (ভৈরব, কিশোরগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

নন্দনপুর যুদ্ধ (ভৈরব, কিশোরগঞ্জ)

নন্দনপুর যুদ্ধ (ভৈরব, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২৪শে অক্টোবর। কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় সংঘটিত এ যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে শহীদ হন এবং অপর একজন ধরা পড়ে চারদিন নির্যাতন ভোগের পর শহীদ হন। ২৩শে অক্টোবর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত সংলগ্ন বামুটিয়া বাজারে ইফতার খেয়ে ভৈরব, রায়পুরা, কুলিয়ারচর ও বেলাবো উপজেলার প্রায় পৌনে দুশো যুক্তিযোদ্ধা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করার জন্য রওনা হন। সামনেই বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মুকুন্দপুর রেল স্টেশন। বাংলাদেশ সীমান্তের শেষ প্রান্ত ছুঁয়ে একটি রেল লাইন চলে গেছে। পাকবাহিনী রেল লাইনের পাশঘেঁষা ইটের তৈরি সুরক্ষিত বাংকারগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। প্রতিটি বাংকারে আমেরিকা ও চীনের তৈরি আধুনিক অস্ত্র নিয়ে তারা পাহারা দিচ্ছে। এরূপ কড়া পাহারার মধ্য দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত সুকৌশলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ৭-৮ মাইল পথ অতিক্রম করে পরের দিন ভোরবেলায় ইসলামপুর গ্রামে পৌঁছান এবং কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেন। গ্রামের মানুষ খুব সতর্কতার সঙ্গে তাঁদের আশ্রয় দেয় এবং তাঁদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে। এদিন রাতের খাবার খেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় রওনা দেন। মুক্তিপাগল গ্রামের মানুষ ৮টি নৌকায় করে তাঁদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাইল পাঁচেক উত্তর দিয়ে তিতাস নদী পার করে দেয়। এরপর তাঁরা সকলে অস্ত্রহাতে নৌকা থেকে নেমে পড়েন। নদীর তীরেই জগদীশপুর গ্রাম। মুক্তিযোদ্ধারা এ গ্রামের পর আরো কয়েকটি গ্রাম অতিক্রম করে সিএন্ডবি সড়কে গিয়ে পৌঁছান। সড়কের পাশ ঘেঁষে পাঞ্জাবি সৈন্যদের শক্ত ব্যূহ। সড়ক অতিক্রম করে মেঘনা নদী পাড়ি দিলেই মুক্তাঞ্চল এবং অনতি দূরেই নন্দনপুর গ্রাম। এ গ্রামের পাশ ঘেঁষে কুমিল্লা- সিলেট সড়ক। নন্দনপুর গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি এ সড়ক অতিক্রম করে পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে। মুক্তিযোদ্ধারা রুদ্ধশ্বাসে এই রাস্তা ধরে ছুটে চলছেন। হঠাৎ গগনবিদারী আওয়াজ করে মেশিনগান গর্জে ওঠে। অতর্কিত এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। এমন সময় অবাঙালিকণ্ঠে উর্দু ভাষায় ধ্বনিত হয়: ফৌজি লোক, গুলি মাত করো। আপকা গুলিছে হামলোক মর জায়েগা।
মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারেন যে, তাঁরা শত্রুর এম্বুশে পড়ে গেছেন। শত্রুর অবস্থান কোন দিকে, তাদের সংখ্যাই-বা কত এবং তাদের হাতে কী ধরনের অস্ত্র রয়েছে তা তাঁরা কিছুই জানেন না। তা সত্ত্বেও তাঁদের কেউ-কেউ পাল্টা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। কিন্তু পাকসেনাদের মেশিনগানের গুলির মুখে তাঁদের হালকা অস্ত্র স্তব্ধ হয়ে যায়। তাই মুহূর্ত দেরি না করে তাঁরা রাস্তার দুপাশের ধানক্ষেতে শুয়ে পড়েন এবং ক্রলিং করে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা একদিকে গেরিলা পদ্ধতি অনুসরণ করে পিছু হটছেন, অন্যদিকে পাকবাহিনী মুষলধারে গুলিবর্ষণ করছে। হঠাৎ মেশিনগানের একটি গুলি মুক্তিযোদ্ধা আশুরঞ্জন দেব (ভৈরব)-এর বাম উরু ভেদ করে ডান উরুতে গিয়ে বিদ্ধ হয়। তিনি চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাকবাহিনী তড়িৎগতিতে এগিয়ে আসছে দেখে আশুরঞ্জন চিৎকার করে বলতে থাকেন: ‘আমার জন্য তোমরা ধরা দিও না। তোমরা পালিয়ে যাও। তোমরা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতা একদিন আসবেই।’ ততক্ষণে শত্রুবাহিনী কাছাকাছি চলে আসায় রক্তাক্ত আশুরঞ্জনকে ফেলে সহযোদ্ধারা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেন এবং তিতাস নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে পৌঁছান।
নন্দনপুর যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক (বাজিতপুর) ও মুজিবুর (রায়পুরা) ঘটনাস্থলে শহীদ হন। আশুরঞ্জনকে পাকসেনারা উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরের দিন তারা মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়ার খেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় রওনা দেন। মুক্তিপাগল গ্রামের মানুষ ৮টি নৌকায় করে তাঁদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাইল পাঁচেক উত্তর দিয়ে তিতাস নদী পার করে দেয়। এরপর তাঁরা সকলে অস্ত্রহাতে নৌকা থেকে নেমে পড়েন। নদীর তীরেই জগদীশপুর গ্রাম। মুক্তিযোদ্ধারা এ গ্রামের পর আরো কয়েকটি গ্রাম অতিক্রম করে সিএন্ডবি সড়কে গিয়ে পৌঁছান। সড়কের পাশ ঘেঁষে পাঞ্জাবি সৈন্যদের শক্ত ব্যূহ। সড়ক অতিক্রম করে মেঘনা নদী পাড়ি দিলেই মুক্তাঞ্চল এবং অনতি দূরেই নন্দনপুর গ্রাম। এ গ্রামের পাশ ঘেঁষে কুমিল্লা- সিলেট সড়ক। নন্দনপুর গ্রামের কাঁচা রাস্তাটি এ সড়ক অতিক্রম করে পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে। মুক্তিযোদ্ধারা রুদ্ধশ্বাসে এই রাস্তা ধরে ছুটে চলছেন। হঠাৎ গগনবিদারী আওয়াজ করে মেশিনগান গর্জে ওঠে। অতর্কিত এ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। এমন সময় অবাঙালিকণ্ঠে উর্দু ভাষায় ধ্বনিত হয়: ফৌজি লোক, গুলি মাত করো। আপকা গুলিছে হামলোক মর জায়েগা।
মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারেন যে, তাঁরা শত্রুর এম্বুশে পড়ে গেছেন। শত্রুর অবস্থান কোন দিকে, তাদের সংখ্যাই-বা কত এবং তাদের হাতে কী ধরনের অস্ত্র রয়েছে তা তাঁরা কিছুই জানেন না। তা সত্ত্বেও তাঁদের কেউ-কেউ পাল্টা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। কিন্তু পাকসেনাদের মেশিনগানের গুলির মুখে তাঁদের হালকা অস্ত্র স্তব্ধ হয়ে যায়। তাই মুহূর্ত দেরি না করে তাঁরা রাস্তার দুপাশের ধানক্ষেতে শুয়ে পড়েন এবং ক্রলিং করে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা একদিকে গেরিলা পদ্ধতি অনুসরণ করে পিছু হটছেন, অন্যদিকে পাকবাহিনী মুষলধারে গুলিবর্ষণ করছে। হঠাৎ মেশিনগানের একটি গুলি মুক্তিযোদ্ধা আশুরঞ্জন দেব (ভৈরব)-এর বাম উরু ভেদ করে ডান উরুতে গিয়ে বিদ্ধ হয়। তিনি চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা তাঁকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাকবাহিনী তড়িৎগতিতে এগিয়ে আসছে দেখে আশুরঞ্জন চিৎকার করে বলতে থাকেন: ‘আমার জন্য তোমরা ধরা দিও না। তোমরা পালিয়ে যাও। তোমরা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতা একদিন আসবেই।’ ততক্ষণে শত্রুবাহিনী কাছাকাছি চলে আসায় রক্তাক্ত আশুরঞ্জনকে ফেলে সহযোদ্ধারা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেন এবং তিতাস নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে পৌঁছান।
নন্দনপুর যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক (বাজিতপুর) ও মুজিবুর (রায়পুরা) ঘটনাস্থলে শহীদ হন। আশুরঞ্জনকে পাকসেনারা উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরের দিন তারা মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়ার কথা মাইকযোগে সমগ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রচার করে এবং আশুরঞ্জন দেবকে রিকশায় উঠিয়ে শহরময় ঘুরিয়ে দেখায়। এরপর তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালীবাড়িতে চারদিন আটকে রেখে অকথ্য নির্যাতনের শেষে ২৯শে অক্টোবর রাত ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণে কুড়লিয়া খালের সেতুর ওপরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে ভৈরব বাজারের একটি সড়কের নামকরণ করা হয় ‘মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আশুরঞ্জন সড়ক। [ইমরান হোসাইন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড