কলেজের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম, বীর প্রতীক (১৯৫৪-১৯৭১) কলেজের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৪ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার অন্তর্গত গোকুলখালী কয়রাডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ফতেহ আলী বিশ্বাস, মাতার নাম সৈয়দতুন নেছা। নজরুল ইসলাম ছাত্রাবস্থা থেকেই পূর্ব বাংলার বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড তাকে ভীষণ ক্ষুব্ধ করে। তিনি দর্শনা কলেজে আইকম প্রথম বর্ষে অধ্যয়নকালে ২০শে এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। নজরুল ইসলাম যুদ্ধবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন ও শত্রুকে মোকাবেলা করার জন্য ভারতের চাকুলিয়ায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ৮নং সেক্টরে যুদ্ধে যোগ দেন। ৮নং সেক্টরের অধীনে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে প্রাণঘাতী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য জীবন বাজি রেখে তিনি যুদ্ধ করেন। সে কারণে যেকোনো অপারেশনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অংশগ্রহণ করতে তিনি দ্বিধা করতেন না। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাত্র তিন মাস পাঁচ দিন আগে ২৫শে সেপ্টেম্বর দেশের অভ্যন্তরে অপারেশনে এসে নিজ গ্রাম কয়রা ডাঙ্গায় পাকসেনাদের হাতে তিনি ধরা পড়েন। নানা তথ্য সংগ্রহের জন্য পাকসেনারা তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। কিন্তু নিজের জীবন উৎসর্গ করে হলেও মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে কোনো তথ্য শত্রুদের দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে নির্মম নির্যাতন শেষে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও জীবনোৎসর্গ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মো. ওসমান গনী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড