You dont have javascript enabled! Please enable it!

নজিপুর গণহত্যা (বানিয়াচঙ্গ, হবিগঞ্জ)

নজিপুর গণহত্যা (বানিয়াচঙ্গ, হবিগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৬ই আগস্ট। এতে ২৪ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। বানিয়াচঙ্গ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম নজিপুর। গ্রামটি নবীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী। কাগাপাশার নিকটবর্তী হাওর এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত এ গ্রামটির অধিবাসীরা ছিল নিরীহ ও দরিদ্র শ্রেণির। তাদের ওপর পাকবাহিনীর অভিযান পরিচালনার বিষয়টি ছিল অভাবনীয়। এ গ্রামের ন্যাপ (মোজাফফর)-এর কর্মী ডা. নিখিল রঞ্জন সরকার মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। তাঁর কর্মতৎপরতা সম্পর্কিত তথ্যাদি স্থানীয় দোসররা পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়। ১৫ই আগস্ট সকালে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজ থেকে সংলগ্ন খোয়াই নদীর ঘাট থেকে পাকবাহিনীর একটি নৌবহর বানিয়াচঙ্গের উদ্দেশে যাত্রা করে। নৌবহরের নেতৃত্বে ছিল পাকবাহিনীর মেজর দুররানী। তাদের সঙ্গে ছিল হবিগঞ্জ মুসলিম লীগ- ও মহকুমা শান্তি কমিটির নেতা আব্দুল বারী ও বানিয়াঙ্গ ১নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল হক মোতওয়াল্লি। দুপুরের আগেই হানাদার বাহিনীর বহর বানিয়াচঙ্গ থানা ঘাটে পৌছায়। সেখানে অবস্থান করে তারা এলাকার সকল রাজাকারকে থানা সদরে সমবেত করে অনেকটা উৎসবমুখর অবস্থায় দিনটি কাটিয়ে সেখানেই রাত্রি যাপন করে। ১৬ই আগস্ট সকালবেলা কয়েকজন পুলিশ ও রাজাকার নিয়ে পাকবাহিনীর সদস্যরা থানা থেকে পূর্বদিকে যাত্রা শুরু করে। নজিপুর গ্রামের কাছে গিয়ে মেজর দুররানী নৌবহর তীরে ভেড়ানোর নির্দেশ দেয়। গ্রামবাসী আচমকা পাকবাহিনীর তৎপরতা প্রত্যক্ষ করে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। হানাদার বাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে প্রথমেই নিখিল সরকারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ভীতি সঞ্চারের জন্য তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে লোকজন প্রাণ বাঁচাতে নৌকা নিয়ে দিকবিদিক ছুটতে থাকে। যাদের নৌকা ছিল না, তারা সাঁতরে হাওরের দিকে ছুটতে থাকে। পালায়নপর মানুষের অনেকে হানাদারদের গুলিতে হতাহত হয় এবং অনেকে তাদের হাতে ধরা পড়ে। ধৃত ব্যক্তিদের হানাদাররা গুলি করে হত্যা করে। নজিপুর গ্রামে গণহত্যার পর তারা পার্শ্ববর্তী কাগাপাশা, গোগরাপুর, রাজেন্দ্রপুর, হালিমপুর, মকা, সেকান্দরপুর প্রভৃতি গ্রামে হামলা করে জানমালের অনেক ক্ষতি সাধন করে। পাকবাহিনীর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড থেকে বৃদ্ধ এবং শিশু কেউই রেহাই পায়নি।
নজিপুর গণহত্যায় ২৪ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান। তারা হলেন— নজিপুর গ্রামের অমূল্য রানী সরকার (স্বামী রঘুনাথ দাশ), রীনা রানী দাশ (পিতা রাকেশ দাশ), কমলাচরণ দাশ (পিতা বাঁশীনাথ দাশ), সতি রানী দাশ (পিতা কমলাচরণ দাশ), কৃপেন্দ্র দাশ (পিতা কমলাচরণ দাশ), পুতুল রানী দাশ (স্বামী কমলাচরণ দাশ), ফটিক চান সরকার (পিতা লালচান সরকার), প্রভাসিনা দাশ (স্বামী ফটিক চান সরকার), শান্তি সরকার (পিতা ফটিকচান সরকার), বাসন্তী সরকার (পিতা ফটিক চান সরকার), নিয়তি সরকার (পিতা ফটিক চান সরকার), মালতী সরকার (পিতা ফটিক চান সরকার), হিরণ্য সরকার (স্বামী চূড়ামণি সরকার), সুধাংশু সরকার (পিতা চূড়ামণি সরকার), মনোরঞ্জন সরকার (পিতা কৃপারাম সরকার), জগময় সরকার (স্বামী কৃপারাম সরকার), নির্মলা সরকার (স্বামী ধনাই সরকার), কাদম্বিনী দাশ (স্বামী আকাশ দাশ), বারীন্দ্র চন্দ্র দাশ (পিতা গোবর্ধন দাশ), মাধুরী রানী দাশ (পিতা গিরীশ চন্দ্র দাশ), হিমানী রানী দাশ (স্বামী মণীন্দ্র চন্দ্র দাশ), ছায়া রানী দাশ (পিতা শ্রীশচন্দ্র দাশ), স্বপ্না রানী দাশ (পিতা গিরিশ চন্দ্র দাশ) এবং ঝন্টু দাশ (পিতা হরেন্দ্র দাশ)। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!