You dont have javascript enabled! Please enable it!

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড গণহত্যা (নড়াইল সদর)

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড গণহত্যা (নড়াইল সদর) সংঘটিত হয় ১৭ই জুলাই। নড়াইল জেলা সদরের রূপগঞ্জ ওয়াপদা ডাকবাংলোয় (বর্তমান নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড) পাকবাহিনীর একটি বড় ক্যাম্প ছিল। ঘটনার দিন পাকিস্তানি মিলিশিয়া বাহিনী ও রাজাকাররা তুলারামপুর গ্রামের একই পরিবারের ৫ জনসহ ৮ জন আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাকে এ ক্যাম্পে ধরে আনে। চরম নির্যাতন শেষে তাদের সকলকে হত্যা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তুলারামপুর গ্রামটি ছিল নড়াইল মহকুমার প্রবেশদ্বার এবং ভৌগোলিক দিক থেকে রণকৌশলগত এলাকা। এখানে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুপক্ষের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করতেন। তাঁদের আশ্রয় দিয়ে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়াও যুদ্ধে অংশ নেয় ঐ গ্রামেরই প্রভাবশালী তরফদার পরিবার। ১৭ই জুলাই ভোরে নড়াইল মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান সোলাইমান মোল্যা (তুলারামপুর)-র নেতৃত্বে পাকসেনা ও রাজাকার বাহিনী এ বাড়িতে ঢোকে। তারা তরফদার বাড়ির আতিয়ার তরফদার, ছালাম তরফদার, লুৎফর তরফদার, রফিউদ্দিন তরফদার, মোশাররফ তরফদার, মাহতাব তরফদার, আলতাফ তরফদার, ফজলু তরফদার, নওশের তরফদার, খয়বর তরফদারসহ একই গ্রামের কাইজার মোল্যা, মোকাম মোল্যা, আকবর মোল্যা, মকবুল শিকদার, সাহিদ শিকদারসহ ২৮ জনকে চোখ বেঁধে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডে স্থাপিত পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তাদের সবাইকে প্রথমে ক্যাম্পের সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তারপর একেকজন করে ভেতরের একটি কক্ষে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং নির্যাতন শেষে সবাইকে ক্যাম্পের পাশে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। পরে হানাদার বাহিনী তাদের মধ্য থেকে ৮ জনকে টেনে- হিচড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পশ্চিম-উত্তর কোণে নিয়ে তাদের দিয়ে জোরপূর্বক কবর খোঁড়ায়। এরপর তাঁদের হাত-পা বেঁধে সেই কবরে নামিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে জীবন্ত কবর দেয়। নরপিশাচরা এ-সময় আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। শহীদ ৮ জন হলেন: আতিয়ার তরফদার, ছালাম তরফদার, মাহতাব তরফদার, রফিউদ্দিন তরফদার, আলতাফ তরফদার, মকবুল শিকদার, কাইজার মোল্যা ও মোকাম মোল্যা। পরবর্তীকালে এ গণকবরের পাশেই এক যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানি ও রাজাকার বাহিনীর পরাজয় ঘটে এবং নড়াইল জেলা শত্রুমুক্ত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস প্রাঙ্গণের এ গণকবর আজো পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের নিষ্ঠুরতার সাক্ষ্য বহন করছে। জানা যায়, পাকবাহিনীর এ ক্যাম্প ও আশপাশে আরো অনেককে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর শহীদদের আত্মীয়-স্বজন ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিরক্ষা পরিষদ গণকবরটি বাঁধাই করে। [শামীমূল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!