You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে নড়াইল সদর উপজেলা

নড়াইল সদর উপজেলা ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর নড়াইলবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশসহ অসহযোগ আন্দোলন- শুরু করে। মার্চের মাঝামাঝি এডভোকেট খন্দকার আব্দুল হাফিজ এমএনএ-কে আহ্বায়ক করে মহকুমা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পরিষদের সদস্যরা ছিলেন এস এম মতিউর রহমান এমপিএ, শাহীদ আলী খান এমপিএ, এডভোকেট মো. শরীফ, এডভোকেট গাজী আলী করিম, এখলাছ উদ্দিন বিশ্বাস, এডভোকেট সরদার আব্দুস সাত্তার, এডভোকেট বজলুর রহমান, তসলিম উদ্দিন সরদার, বি এম মতিয়ার রহমান, দেলোয়ার রহমান ও বাদশা মতিয়ার রহমান। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ফজলুর রহমান জিন্নাহকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এর সদস্য ছিলেন জিএস শাহিদুর রহমান, শরীফ হুমায়ুন কবির, অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, খায়রুজ্জামান, হাবিবুর রহমান খান প্রমুখ। ২৩শে মার্চ নড়াইল মহকুমা প্রশাসন অফিস থেকে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পোড়ানো হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। নড়াইলের মহকুমা প্রশাসক কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর সহযোগিতায় ২৬শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নূর মোহাম্মদ মিঞা, খন্দকার আব্দুল হাফিজ এমএনএ, আনোয়ারুজ্জামান প্রমুখের নেতৃত্বে নড়াইল সরকারি অস্ত্রাগার থেকে প্রায় তিনশত রাইফেল ও একলাখ গুলি উদ্ধার করা হয়। নড়াইল ডাকবাংলো এবং গোচর এলাকায় (বর্তমান সার্কিট হাউস ও এসপির বাসভবন) মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া নড়াইলের বহু মুক্তিযোদ্ধা পশ্চিমবঙ্গের টালিখোলা, বয়রা, ব্যারাকপুর, গোবরডাঙ্গা, বিহারের সিংভূম, উত্তর প্রদেশের চাকার্তা-তান্ডুয়া, হাফলংসহ ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নড়াইলের বি এম মতিয়ার রহমানের বাড়ি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস ও রসদভাণ্ডার। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা নড়াইলে প্রবেশের সময় সিমান্তবর্তী মাগুরার পুলুম এলাকায় নকশালদের হাতে ধরা পড়েন। নকশালরা তাঁদের ৫৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড ও বিস্ফোরকসহ সবকিছু লুট করে নেয়। পরে তাঁরা আবার ভারতে গিয়ে অস্ত্ৰ সংগ্ৰহ করে নড়াইলে প্রবেশ করেন।
নড়াইল সদর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা হলেন- খন্দকার আব্দুল হাফিজ এমএনএ (নড়াইল), লে. মতিয়ার রহমান এমপিএ (লোহাগড়া), শাহীদ আলী খান এমপিএ (নড়াগাতি), এখলাছ উদ্দিন বিশ্বাস (কালিয়া), বি এম মতিয়ার রহমান (নড়াইল), এডভোকেট গাজী আলী করিম (নড়াইল), এডভোকেট সরদার আব্দুস সাত্তার (কালিয়া), এডভোকেট বজলুর রহমান (চাঁচুড়ী) প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নড়াইল মহকুমা মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন জাহিদুর রহমান (ইতনা) এবং লোহাগড়া ও সদর থানা কমান্ডার ছিলেন শরীফ হুমায়ুন কবির (ভবানীপুর)। সদর থানা মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন উজির আলী (বড়দিয়া)। নড়াইল মহকুমা গেরিলা বেইজ ও ডেমুলেশন কমান্ডার অ্যান্ড পলিটিক্যাল মোটিভেটর ছিলেন এডভোকেট ফজলুর রহমান জিন্নাহ (ভবানীপুর)। জি-ফোর কোম্পানির প্রধান ছিলেন লে. কমল সিদ্দিকী (মাগুরা) এবং সেকেন্ড-ইন- কমান্ড সামসুর রহমান (নড়াইল শহর)। ১১নং সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন লে. মতিয়ার রহমান এমপিএ (লোহাগড়া)। ২৭শে মার্চ মুক্তিযোদ্ধারা যশোর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। নড়াইলের বহু সংখ্যক মুক্তিকামী মানুষ কিছু আগ্নেয়াস্ত্রসহ ঢাল, সড়কি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যশোর প্রবেশ করে। এ-সময় শহরের চাঁচড়ার মোড় ও খয়েরতলাসহ কয়েকটি স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে যশোর ইপিআর সদস্যদের যুদ্ধ হয়। তাঁদের সঙ্গে নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধারাও অংশ নেন। ৫ই এপ্রিল যশোর-নড়াইল সড়কে যশোর সদরের অন্তর্গত দায়তলা ব্রিজের কাছে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রতিরোধযুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে কালিয়ার পাটকেলবাড়ি গ্রামের লুৎফর রহমান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন এবং পরে তাঁর মৃত্যু হয়। ২৫শে মার্চ খুলনার ফুলতলায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে এডভোকেট সৈয়দ মামুন-উর-রশীদ কাঞ্চন ( পিতা সৈয়দ আহমেদ) শহীদ হন।
৬ই এপ্রিল পাকবাহিনী দুটি জেট বিমান থেকে নড়াইল থানার এসডিও-র বাড়িসহ শহরে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে। এতে আদালত চত্বরের কাঞ্চিরাম ও ট্যাংরা কুণ্ডুর মিষ্টির দোকানসহ তিনটি দোকান আগুনে পুড়ে যায়। শেল নিক্ষেপে নড়াইল ফেরিঘাটের ফেরিটি ডুবে যায়। এর পরপরই পাকবাহিনী নড়াইলে প্রবেশ করে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডে (তৎকালীন ওয়াপদা) ক্যাম্প স্থাপন করে। পরে রাজাকাররাও এখানে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে।
পাকবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এপ্রিল মাসে তুলারামপুর গ্রামের সোলাইমান মোল্লাকে চেয়ারম্যান করে নড়াইল মহকুমা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অন্য কর্মকর্তারা হলো- ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট খায়রুজ্জামান (নড়াইল শহর), সেক্রেটারি মোক্তার হারুনর রশিদ, সহ-সেক্রেটারি ডা. আবুল হোসেন, সদস্য মাওলানা আশরাফ আলী (জামরিলডাঙ্গা), ওয়াজেদ আলী (পুরুলিয়া- চাঁদপুর), ডা. ছব্বত মোল্লা (শিমুলিয়া), লতিফ গাজী (কালিয়া), নড়াইল শহরের আব্দুল মান্নান মল্লিক, আমির হোসেন ও কাদের মোক্তার।
শান্তি কমিটির তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় রাজাকার বাহিনী। এ বাহিনীর শীর্ষস্থানীয়রা হলো পেড়লির এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস, তুলারামপুরের সদর উদ্দিন, নড়াইল শহরের আওয়াল মণ্ডল, ধুন্দার হাতেম মোল্লা, রামসিধির আইয়ুব হোসেন ও মুসলিম লীগ নেতা তবিবর রহমান, যশোরের বাবুল কমান্ডার, আলোকদিয়ার ইউসুফ মোল্লা, ইরাদত মোল্লা, ইরাফ মোল্লা, আজাহার মোল্লা, আলতাফ মোল্লা ও গনি জল্লাদ, বলরামপুরের সিরাজ মাওলানা, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক সিদ্দিক আহম্মেদ, ফুলসরের ওহাব জল্লাদ, পলইডাঙ্গার এখলাস জল্লাদ, কাগজিপাড়ার মোমরেজ জল্লাদ, বরাশোলার ওমর জল্লাদ, পেড়লি গ্রামের সৈয়দ আশরাফ জল্লাদ প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধের নয়মাসে পাকসেনা ও রাজাকাররা নড়াইল সদর উপজেলায় তিন সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। ১৩ই এপ্রিল পাকবাহিনী যশোর থেকে এসে নড়াইল চৌরাস্তায় একটি রেস্টুরেন্টের মালিক মন্টু এবং নড়াইল শহরের মুজিবর রহমান ও আদিবাসী হরিপদ সরদারকে হত্যা করে। পরে তারা ভাটিয়া গ্রামের কালু বোস, সরশপুরের প্রফুল্ল মিত্র, নিরোদ বিশ্বাস, রূপগঞ্জ বাজারের পান-সিগারেট বিক্রেতা সুরেন বিশ্বাস ও শ্রমিক নিমাই বিশ্বাসকে যশোরের দাইতলা ব্রিজের পাশে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। ২০শে এপ্রিল পাকসেনা ও রাজাকাররা আউড়িয়া গ্রামের সমরেন্দ্রনাথ বোস ও অদু ঠাকুরকে হত্যা করে।
এরপর রাজাকাররা মাইজপাড়া, মুলিয়া, কলোড়া, শেখাটি, তুলারামপুর, বাঁশগ্রাম, ভদ্রবিলা, আউড়িয়া, চণ্ডিবরপুর, বিছালী ও ভদ্রবিলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দুই হাজার হিন্দুবাড়ি লুট করে এবং অনেককে হত্যা করে। মে মাসে বাঁশগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় দুই হাজার মানুষ ভারতে যাওয়ার পথে রামসিধি গ্রামে পৌঁছলে স্থানীয় রাজাকাররা তাদের মালামাল সব লুট করে নেয়।
মুলিয়া ইউনিয়নের নুনিক্ষীর গ্রামের বাসিন্দা নড়াইল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান সহকারী প্রধান শিক্ষক অনিল বিশ্বাসের পিতা কালিপদ বিশ্বাসকে রাজাকাররা জবাই করে হত্যা করে এবং তার বাড়ি লুট করে পুড়িয়ে দেয়। বোড়াবাদুরিয়া গ্রামের মান্নান মিয়ার বাড়িতে লোহাগড়ার ডা. ওসমানের পুত্র টিপুকে হত্যার পর লাশ টুকরো-টুকরো করে কলাপাতা ও কচুপাতায় রাস্তায় বিছিয়ে রাখে।
১৭ই জুলাই নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় পাকসেনা ও রাজাকাররা ৮ জন আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়। এ ঘটনা নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড গণহত্যা নামে পরিচিত।
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি নড়াইলের বিশিষ্ট লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দাতা শফিউদ্দিন খানের শ্যালক ভোলা কাজীকে, ২০শে আগস্ট শফিউদ্দিন খানের পুত্র আশরাফুল আলমকে এবং ১৬ই ডিসেম্বরের পরপর শফিউদ্দিন খান ও তাঁর অপর পুত্র শরফুল আলম খানকে স্থানীয় রাজাকার ইরাপ মোল্লা, রতন মোল্লা, বশির মোল্লা ও কাদের মোল্লার নেতৃত্বে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা দ্বারা বোঝা যায় রাজাকাররা এখানে কতটা প্রভাবশালী ছিল।
নড়াইল থানার তৎকালীন এসডিও-র অফিস ও বাসভবনে পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ছিল। বর্তমান জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ছিল রাজাকারদের সবচেয়ে বড় নির্যাতনকেন্দ্র। এছাড়া তুলারামপুর বাজারে কাজলা নদীর তীরে অবস্থিত ডাকবাংলো, নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, হবখালি ইউনিয়নের পাজারখালি তহশিল ও ইউপি অফিস, মাইজপাড়ার ক্ষিতিশ সাহার পরিত্যক্ত বাড়ি, বিষ্ণুপুর গ্রামের এডভোকেট উত্তম ঘোষের পরিত্যক্ত বাড়ি এবং মাগুরা গ্রামের চারুকরদের পরিত্যক্ত বাড়িতে রাজাকারদের ক্যাম্প ও নির্যাতনকেন্দ্র ছিল। এসব কেন্দ্রে নিরীহ লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। লুটের মালামালও এখানে রাখা হতো। যুবতী নারীদের ধরে এনে দিনের পর দিন পাশবিক নির্যাতন চালানো হতো।
নড়াইল সদরে একটি বধ্যভূমি ও একটি গণকবর আছে নড়াইল লঞ্চঘাট বধ্যভূমি- ও নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড গণকবর। বধ্যভূমিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভারতগামী শরণার্থী, নিরীহ লোকজন ও ধরাপড়া মুক্তিযোদ্ধা মিলিয়ে আনুমানিক তিন হাজার লোককে হত্যা করা হয় এবং গণকবরে মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু লোককে হত্যার পর কবর দেয়া হয়।
নড়াইল সদর উপজেলায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি যুদ্ধ হয় পাজারখালির যুদ্ধ, মাইজপাড়ার যুদ্ধ, মুলদাইড় ব্রিজের যুদ্ধ এবং রূপগঞ্জ যুদ্ধ। নভেম্বর মাসের শেষে হবখালি ইউনিয়নের পাজারখালি বাজারে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের মধ্যে একঘণ্টাব্যাপী গুলিবিনিময় হয়। এক পর্যায়ে রাজাকাররা পিছু হটে। ৬ই ডিসেম্বর মাইজপাড়ার ক্ষিতিশ সাহার বাড়ির রাজাকার ক্যাম্পে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে সাইফুল নামে এক রাজাকার নিহত হয়। মুলদাইড় গ্রামে নড়াইল-লক্ষ্মীপাশা সড়কে ব্রিজের পাশে সংঘটিত রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে তবিবরসহ দুজন রাজাকার নিহত হয়। রূপগঞ্জ যুদ্ধ হয় দুদিন ৯ ও ১০ই ডিসেম্বর। প্রথম দিন মুক্তিযোদ্ধারা রূপগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থানরত রাজাকারদের আক্রমণ করেন। এতে মতিয়ার রহমান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। দ্বিতীয় দিন মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে রূপগঞ্জ ওয়াপদার (বর্তমান নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড) মধ্যে অবস্থিত পাকসেনা ও রাজাকারদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এতে দুজন পাকসেনা নিহত ও দুজন আহত হয় এবং ২২ জন পাকসেনা ও ৪৫ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে এদিনই (১০ই ডিসেম্বর) নড়াইল সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ (পিতা মো. আমানত শেখ, মহিষখোলা), মাসরুরুল হক সিদ্দিকী, বীর উত্তম (পিতা জহুর আহমেদ, হবখালী) ও খোরশেদ আলম, বীর প্রতীক (পিতা ইয়াকুব শরীফ, চান্দের চর)।
নড়াইল সদর উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ (৫ই সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি যুদ্ধে শহীদ), কাজী ইয়াজদাইন হোসেন, কাজী মশিউল আলী, সাঈফ মিজানুর রহমান (ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, পিরোজপুর; পিরোজপুরে শহীদ), সিপাহি গোলাম সরোয়ার, ইউনুস আলী খান, বশির মোল্লা, সিপাহি জামসেদ আলী মিয়া, সিপাহি বশির আহমেদ বিশ্বাস, সিপাহি মো. তবিবর রহমান, খন্দকার আব্দুর রশিদ, সানোয়ার হোসেন সরদার, ল্যান্স নায়েক লায়েক মিয়া, সিপাহি সামসুর রহমান, সিপাহি আফিল উদ্দিন, সিপাহি শেখ সাইদুর রহমান, সোহরাব হোসেন মোল্লা, রুস্তম আলী, আবুল হোসেন, আব্দুল ওহাব মোল্লা, খন্দকার মহিউদ্দিন এবং মতিয়ার রহমান।
নড়াইল সদর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিরক্ষার্থে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের নামে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং একটি সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার, ‘বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ’, ‘বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ এবং ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ স্মৃতিস্তম্ভ। তাঁর গ্রাম মহিষখোলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নূর মোহাম্মদনগর’। এছাড়া রয়েছে একটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামসহ স্মৃতিস্তম্ভ এবং নড়াইল লঞ্চঘাট বধ্যভূমিতে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। শহীদ সৈয়দ মামুন-উর-রশীদ কাঞ্চনের নামে নড়াইল আইনজীবী ভবনের সামনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। নড়াইল শহরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাঈফ মিজানুর রহমান ও শহীদ মুজিবর রহমানের নামে দুটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। [শামীমূল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!