নড়িয়া থানা যুদ্ধ (নড়িয়া, শরীয়তপুর)
নড়িয়া থানা যুদ্ধ (নড়িয়া, শরীয়তপুর) পরিচালিত হয় দুবার – প্রথমে ২৩শে জুন এবং পরবর্তীতে ৫ই সেপ্টেম্বর। এতে ৩৫ জন পুলিশ ও রাজাকার নিহত হয় এবং ৭টি রাইফেল ও ৩৫০ রাউন্ড গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
নড়িয়া থানা ছিল পাকবাহিনীর দখলে। সেখানে পুলিশ ও রাজাকাররা অবস্থান করত। নড়িয়া অঞ্চলকে পাকবাহিনীর দখলমুক্ত করার উদ্ধেশ্যে ২২শে জুন নড়িয়া থানার পশ্চিম পার্শ্বে পাটক্ষেতে বসে আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি স্টুয়ার্ড মুজিবের নেতৃত্বে ইউনুস আলী মিতালী, মেডিকেল ছাত্র কাঞ্চন, এস এম কামালউদ্দিন মন্টু ও রওশন আলীসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এক গোপন বৈঠকে নড়িয়া থানা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। থানার ভেতরে রেকি করার জন্য হাফেজ আলাউদ্দিনকে এবং থানার বাইরে ইউনুস আলী মিতালী, কামালউদ্দিন এবং রওশন আলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩শে জুন সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর মুক্তিযোদ্ধারা থানার দক্ষিণ-পূর্ব কোণ ও পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ করেন। আক্রমণের কিছুক্ষণ পর পশ্চিম দিকে অবস্থানরত কমান্ডার ইউনুস আলী পুলিশ ও রাজাকারদের যুদ্ধ বন্ধ করে আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানান। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ না করে পাল্টা গুলি চালায়। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। প্রায় দুঘণ্টা যুদ্ধের পর থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। প্রচণ্ড এ-যুদ্ধে পুলিশ ও রাজাকারসহ ৩৫ জন নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা থানা থেকে ৭টি রাইফেল ও ৩৫০ রাউন্ডের মতো গুলি উদ্ধার করেন। প্রথম অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় হলেও পরবর্তীতে পাকবাহিনী পুনরায় নড়িয়া থানা তাদের দখলে নেয়।
৫ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় নড়িয়া থানায় অপারেশন করেন। সুবেদার জয়নাল আবেদীন ও এস এম কামালউদ্দিন মন্টুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে ভোররাত ৪টায় থানার দক্ষিণ ও পূর্ব-উত্তর কোণ থেকে পুনরায় আক্রমণ করেন। থানা থেকে পাকবাহিনীর দোসর পুলিশ ও রাজাকাররা পাল্টা আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। ৩ ঘণ্টা স্থায়ী এ-যুদ্ধে পুলিশ ও রাজাকারসহ ২৫ জনের মতো নিহত হয়। এ অপারেশনের ফলে নড়িয়া থানা সম্পূর্ণভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। [আবদুর রব শিকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড