মুক্তিযুদ্ধে নগরকান্দা উপজেলা (ফরিদপুর)
নগরকান্দা উপজেলা (ফরিদপুর) মুক্তিযুদ্ধের সময় নগরকান্দা থানায় ১৭টি ইউনিয়ন ছিল। ২০০৬ সালে এখান থেকে ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে সালথা উপজেলা গঠিত হয়। বর্তমানে নগরকান্দা উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা রয়েছে।
১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সারাদেশ উত্তাল ছিল। নগরকান্দার এম এন একাডেমি ও থানার অন্যান্য স্কুলের ছাত্ররা মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে তাতে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ-এর কেন্দ্রীয় নেতা কে এম ওবায়দুর রহমান এবং প্রাদেশিক পরিষদে এ ওয়াই আমিন উদ্দিন আহমেদ নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। এ বিজয় এবং ৭১-এর মার্চের অসহযোগ আন্দোলন- নগরকান্দার মানুষকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করে।
৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে কার্যত বাঙালিদের স্বাধীনতার দাবির পক্ষে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ- এর উদাত্ত আহ্বান নগরকান্দার ছাত্র-যুবক ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২৫শে মার্চ ঢাকায় পাকবাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর থেকে নগরকান্দা হাইস্কুল মাঠে ছাত্র- যুবকেরা বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শুরু করে। পরে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার আজিজ মোল্লার নেতৃত্বে তারা সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য সংগঠিত হতে থাকে। নগরকান্দা থানার মেঘার কান্দির রাজেশ্বর টিকাদারের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ২১শে এপ্রিল ফরিদপুরের ডিসি নুরুল মোমেন খান দুটি জিপে কিছু পুলিশ নিয়ে ভাঙ্গা যাওয়ার সময় হেমায়েত উদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল তাদের আটক করে। আটককৃতদের লস্কারদিয়ায় (নগরকান্দা) কে এম ওবায়দুর রহমান এমএনএ-এর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাঁর সঙ্গে আলোচনার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়৷ তবে নগরকান্দা থানার অস্ত্র দেয়ার জন্য এসপি-কে দিয়ে ওসির কাছে একটি চিঠি লিখিয়ে নেয়া হয়। এদিন ও এসপি-কে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে মুক্তিযোদ্ধারা একটি রিভলবার, একটি স্টেনগান, ১০-১২টি রাইফেল সংগ্রহ করেন। বিকেলে গোলজার, দুলাল, মোজাফফর আলী আকন্দ, মোজাম, খন্দকার
সেলিম, আশরাফজ্জামান মজনু ও নূর আলম-সহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কয়েকজন সদস্য নগরকান্দা থানায় গিয়ে ওসিকে এসপি- র লেখা চিঠিটি দেন। ওসি কার্তিক চন্দ্র চাপের মুখে ম্যাগাজিনের চাবি তাদের দিতে বাধ্য হন। গোলজার ও তার সঙ্গীরা স্থানীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কর্মীদের পাহারায় রেখে ম্যাগাজিনের চাবি আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রব বকুল মিয়াকে দেন। নগরকান্দা থানা থেকে অস্ত্র নেয়ার ব্যাপারে এ ওয়াই আমিন উদ্দিন আহম্মেদ এমপিএ ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান আলীর মধ্যে আলোচনা হয়। সে মোতাবেক সোলায়মান আলী পুড়াপাড়ার দীপক রায়, দেলোয়ার হোসেন, সেলিম মিয়া প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে থানার অস্ত্র পুড়াপাড়ায় নিয়ে যান। এসব অস্ত্রের মধ্যে ২০-২৫টি রাইফেল, কয়েকটি বন্দুক ও প্রচুর গুলি ছিল।
ভাঙ্গা থানা থেকে বিশটি রাইফেল ও গুলি-সহ তোফাজ্জেল হোসেন খসরু, আব্দুল সামাদ ও ভাঙ্গার ছাত্র-যুবকরা নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুক্ত হলে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে সোলায়মান আলী, আওয়ামী লীগ কর্মী হাবিবুর রহমান ওরফে নান্নু মিয়া প্রমুখ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন আলতাফ হোসেন খান, মোফাজ্জেল হোসেন খসরু, আব্দুস সামাদ ও দেলোয়ার হোসেন তাজ। এঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ও ছুটিতে আসা সৈনিক।
নগরকান্দা থানায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক ছিলেন— কে এম ওবায়দুর রহমান এমএনএ, এ ওয়াই আমিনউদ্দিন আহমেদ এমপিএ, আ. আজিজ মোল্লা, সোলায়মান আলী, আব্দুর রব ওরফে বকুল মিয়া প্রমুখ। কে এম ওবায়দুর রহমান ২৯শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও সমন্বয়ের জন্য গঠিত জেলা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ফরিদপুর পতনের পর এপ্রিলের শেষদিকে তিনি মুজিবনগরে যান। সেখান থেকে ভারতের চাকুলিয়ায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পলিটিক্যাল মোটিভেটর হিসেবে কাজ করেন এবং পরে কোলকাতায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। এ ওয়াই আমিনউদ্দিন আহমেদ নগরকান্দায় মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ভারতের কল্যাণী যুবশিবির পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। আ. আজিজ মোল্লা সেনাবাহিনীর সাবেক হাবিলদার ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তাঁকে কমান্ডার করে নগরকান্দা মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন গড়ে তোলা হয়। পরে তিনি চাঁদহাট যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। সোলায়মান আলী নগরকান্দা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন নগরকান্দা থানার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। আব্দুর রব ওরফে বকুল মিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এবং থানা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
৩০শে এপ্রিল সকালে কোনোরূপ প্রতিরোধ ছাড়াই একদল পাকসেনা নগরকান্দা থানার চরযোশ্বরদী গ্রামে প্রবেশ করে। সঙ্গে ছিল তাদের এ দেশীয় দোসর টুকু মিয়া, কোটন মুন্সি, হালিম মুন্সি প্রমুখ। নগরকান্দা থানায় তারা ক্যাম্প স্থাপন করে।
নগরকান্দা থানার মৌলভী আব্দুস সালাম (কাজী মৌলভী, গ্রাম ছাগলদি)-কে সভাপতি করে থানা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটির অন্য উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলো- ওয়াহেদ সর্দার (বিল গোবিন্দপুর), মকবুল খান, রুস্তম আলী খান (জুঙ্গুরদী), চাঁন কাজী প্রমুখ। জাফর মাস্টার (নগরকান্দা) ও তার ছোট ভাই খোকনের নেতৃত্বে মুজাহিদ ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এরা নগরকান্দা থানার বিভিন্ন গ্রামে হিন্দু ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের বাড়িতে লুটপাট, নারীধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাদের সঙ্গী ছিল মিরাকান্দা গ্রামের মনু ডাক্তার, রসিদ মিয়া, সিদ্দিক মিয়াসহ আরো অনেকে।
৩০শে এপ্রিল পাকবাহিনী চরযোশ্বরদী গ্রামে প্রবেশ করে নেপাল সাহার বাড়িসহ অনেক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। পাকসেনারা স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় কোদালিয়া, চাঁদহাট, পুড়াপাড়া, দফা, গোপালপর্দী, বাগাট, ঘুনাপাড়া, রগুরদিয়া প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, নারীনির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটায়। ৩০ ও ৩১শে মে এবং ১লা জুন নগরকান্দায় দুশতাধিক লোককে হত্যা করা হয়, যা নগরকান্দা হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। এ-সময় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং নারীধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। পাকবাহিনী কোদালিয়া গ্রামের ১৮ জন মহিলাকে হত্যা করে। <কোদালিয়া গণহত্যা ছাড়াও ৩১শে মে আরেকটি গণহত্যা সংঘটিত হয় <আশফরদি গণহত্যা। এতে ১০ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হয়।
নগরকান্দায় পাকসেনাদের হাতে ধৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ফরিদপুর বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। নগরকান্দা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুর রব বকুলকে ফরিদপুর সেনা ক্যাম্পে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়।
কোদালিয়ায় ৩০শে মে যে ১৮ জন মহিলাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তাঁদের একই গ্রামে গণকবর দেয়া হয়। এসব কবর এখনো সেখানে রয়েছে।
২১শে এপ্রিল নগরকান্দা থানা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র নেয়ার কিছুদিন পর ওসি কার্তিক চন্দ্র কিছু পুলিশ নিয়ে থানায় এসে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেন। তবে তাদের কাছে রাইফেল বা অনুরূপ কোনো অস্ত্র ছিল না। এ-সময় বৈধ বন্দুকধারীদের থানায় বন্দুক জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। বেশকিছু বন্দুক জমা পড়ার খবর পেয়ে ৪ঠা মে সকাল ১১টার দিকে আজিজ মোল্লার দলের ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলীর নেতৃত্বে থানা ঘেরাও করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে ওসি কার্তিক চন্দ্র পালিয়ে যান। থানায় অবস্থানরত ভাঙ্গা সার্কেলের সিআই, একজন দারোগা, একজন জমাদার এবং সিও (উন্নয়ন)-কে আটক করা হয়। সিপাইদের শপথ করিয়ে স্ব-স্ব এলাকায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সিআই-এর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। থানা থেকে একটি রিভলবার ও বেশকিছু গুলি হস্তগত করা হয়।
২৯শে মে চাঁদহাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। চাঁদহাট যুদ্ধ-কে অনেকে প্রতিরোধযুদ্ধ বলেও মনে করেন। এখানে নগরকান্দায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কমান্ডার আজিজ মোল্লার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আলতাফ হোসেন ও দহিসারার রশিদ ফকিরের নেতৃত্বে দুটি দল অংশগ্রহণ করে। এছাড়া আশপাশের গ্রামের হাজার-হাজার সাধারণ মানুষ ঢাল-সড়কি নিয়ে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে চারদিক প্রকম্পিত করে তোলে। ফলে পাকসেনারা দিশেহারা হয়ে বিলে নেমে যায়। এদিন পাকসেনাদের সহযোগী রাজাকার জাফর জনতার হাতে নিহত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ও দুজন লেফটেন্যান্টসহ অনেকে নিহত হয়। অপরদিকে দুজন মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সরদার (নাঘারদিয়া) ও নুরু মিয়া (ঈশ্বরদী) এবং মনোয়ারা বেগম নামে একজন সাধারণ নারী এ-যুদ্ধে শহীদ হন। আজিজ মোল্যার পরিকল্পনা, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস এবং জনগণের অংশগ্রহণ ও উৎসাহ ছিল এ-যুদ্ধ জয়ের প্রেরণা। এ-যুদ্ধে পাকসেনারা সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়।
চাঁদহাট যুদ্ধের পর আজিজ মোল্যার নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি, উদ্যম ও সাহস বৃদ্ধি পায়। আলতাফ হোসেন খানের নেতৃত্বে ভিন্ন একটি দল গঠিত হয়। শশার লুৎফর রহমান ও আটকাহনিয়ার সূর্য মোল্যার নেতৃত্বে স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হন।
এছাড়া খন্দকার মনজুরুল ইসলাম, কদমতলির মোহাম্মদ শহিদ মিয়া, মাঝারদিয়ার বাদশা, নগরকান্দার মানিক চন্দ্র দাস মন্টু ও ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্রুপগুলো নগরকান্দায় প্রবেশ করে। এ গ্রুপগুলোর বেশিরভাগই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফিরে আসায় মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে স্থানীয় শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের তৎপরতা কমে যায়। তাদের অনেকেই ফরিদপুরে আশ্রয়গ্রহণ করে। নগরকান্দা থানার আশপাশের গ্রামের রাজাকাররা থানায় এসে আশ্রয় নেয়। আবুল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী-র একটি গ্রুপ নগরকান্দায় প্রবেশ করে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে তৎপরতার মাধ্যমে জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে।
২৫-৩০ জন পাকসেনা ১৭ই নভেম্বরের আগের রাতে নগরকান্দায় অবস্থান করে। তাদের সঙ্গে ছিল ফরিদপুর জেলা আলবদর কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধারা নগরকান্দা খেয়াঘাটের ঠাকুর দাসের বাড়ির কাছে বাংকার করে এম্বুশ করেন। সকালে পাকসেনারা খেয়ানৌকায় উঠলে মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ করেন। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় পেছনের পাকসেনারা গুলি ছুড়তে-ছুড়তে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অবস্থা প্রতিকূল দেখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন এবং পরস্পর বিচ্ছন্ন হয়ে যান। সে-সময় হাবিলদার আব্দুল বারেক স্টেনগান হাতে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হন।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নগরকান্দা থানার পুলিশ ও রাজাকারদের চারদিক থেকে ঘেরাও করে রাখেন থানা থেকে কেউ বেরুতে সাহস পেত না। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকদফা আক্রমণের ফলে থানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকাররা ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়ে। এ সময় নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধাদের সব গ্রুপ এবং ভাঙ্গা ও মুকসুদপুরের বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা সম্মিলিতভাবে নগরকান্দা থানা আক্রমণ- করেন। আক্রমণের তীব্রতায় সকল পুলিশ ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে এবং থানায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৭ই নভেম্বর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
নগরকান্দা উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- হাবিলদার আব্দুল বারেক (পিতা ওলিমুদ্দিন, বাস্তপট্টি), আবু বকর সদরদার (পিতা ফালু সর্দার, নাঘারদিয়া), মো. নূরু মাতুব্বর (পিতা আ. আজিজ মাতুব্বর, কাইচাইল), আলেফ বিশ্বাস (পিতা আলফু বিশ্বাস, দহিসারা) ও লুৎফর রহমান (পিতা তাহের উদ্দিন, শশা)।
কোদালিয়া গ্রামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। ঢাকা- খুলনা রোডের জয়বাংলা মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। নগরকান্দা সদরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেকের নামে একটি সড়ক রয়েছে। পৌরসভায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বেগম আকরামুন্নেসার নামে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [মো. রফিকুজ্জামান মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড