নগরকান্দা থানা আক্রমণ (ফরিদপুর)
নগরকান্দা থানা আক্রমণ (ফরিদপুর) পরিচালিত হয় নভেম্বর মাসে। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের এ আক্রমণ স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
নভেম্বরের পূর্বে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালিত কয়েক দফা ছোট আকারের আক্রমণে থানার পুলিশ সদস্যরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা বাইরে বেরুতে সাহস পেত না। সার্বক্ষণিক পাহারায় থানার মধ্যেই থাকত। স্থানীয় রাজাকাররা তাদের পাহারা দিত। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নগরকান্দার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সব গ্রুপ এবং ভাঙ্গা ও মুকসুদপুরের বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা সম্মিলিতভাবে থানায় আক্রমণ করেন। এ আক্রমণ ও যুদ্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এতে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।
চূড়ান্ত আক্রমণের পূর্বে মুক্তিযোদ্ধারা থানার চারপাশে অবস্থান গ্রহণ করেন। জনতা চারদিক থেকে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিতে থাকে। দুপুরের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করতে-করতে থানায় প্রবেশ করেন। তখন পুলিশ সদলবলে আত্মসমর্পণ করে। থানায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। দারোগা আক্কেল আলী নিজের রিভলবারের গুলিতে আত্মহত্যা করে। থানা থেকে একটি এলএমজি, শতাধিক রাইফেল ও বহু গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
এ ঘটনার পর ভাঙ্গার পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা ও সদরপুর থানা গুটিয়ে ফেলা হয়। ফলে এ এলাকায় মুক্তিবাহিনীর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ-যুদ্ধে ভাঙ্গার সালাম গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা দুলাল রায় বুলেটে আহত হন। কমান্ডার আজিজ মোল্লা ছিলেন নগরকান্দা থানা আক্রমণের মূল নেতৃত্বে। হামিদ জমাদ্দার, আলতাফ হোসেন খান, মহিউদ্দিন মোল্লা, আবুল হোসেন, সূর্য মোল্লা, শহীদ বাদশা প্রমুখ গ্রুপ কমান্ডার নিজ-নিজ দল নিয়ে এ আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন। [আবু সাঈদ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড