নগরকূল গণহত্যা (তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ)
নগরকূল গণহত্যা (তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় এপ্রিল মাসে। এতে ১৭ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। ২০শে এপ্রিল পাকবাহিনী প্রথম নগরকূল গ্রামে প্রবেশ করে। স্থানীয় দোসরদের সহযোগিতায় তারা হিন্দু অধ্যুষিত এ গ্রামে পরপর তিনবার হামলা চালায়। পাকবাহিনীর দোসর কুখ্যাত -রাজাকার- আব্দুল গফুর মুন্সি (ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য) এবং তার ছেলে আসাবুদ্দিন মুন্সির নেতৃত্বে স্থানীয় কিছু রাজাকার ও আলবদর- এ গ্রামে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তারা নদীপথে নৌকাযোগে রাতের অন্ধকারে গ্রামের ভেতর প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং প্রাণভয়ে পালানোর সময় হিন্দু-মুসলমান, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হত্যা করে। যুবতি নারীদের ধরে নিয়ে তাদের ওপর দিনের পর দিন নির্যাতন চালায়। তারা নগরকূল গ্রামে নির্যাতন সেল তৈরি করে এবং সেখানে আটকে রেখে গ্রামের সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে। আটককৃতদের মধ্যে কিছু লোককে কিশোরগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়, আর কিছু লোককে নরসুন্দা শাখা নদীর উত্তর পাড়ে নগরকূল বটতলা (বর্তমানে শ্মশানঘাট) নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। অন্যান্য স্থানে গণহত্যার শিকার বহু অজ্ঞাত মানুষের দড়িবাঁধা লাশ নদীর স্রোতে ভেসে এসে বটতলায় জমা হয় এবং স্থানটি মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়। নগরকূল গণহত্যায় যারা শহীদ হন, তারা হলেন- সুভাষ চন্দ্র ভৌমিক (পিতা প্রসন্ন ভৌমিক), সুরেন্দ্র সরকার (পিতা গোলক সরকার), নরেশ ভৌমিক (পিতা বৈকুণ্ঠ ভৌমিক), শরৎ সরকার কেনু (পিতা বোধরাম সরকার), জগৎ সরকার (পিতা শিবচরণ সরকার), সুরেশ সরকার (পিতা ভগীরথ সরকার), হরিদাস বর্মণ (পিতা রমেশ বর্মণ), সুরেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক (পিতা মেছো ভৌমিক), পরেশ চন্দ্র ভৌমিক (পিতা বৈকুণ্ঠ ভৌমিক), ক্ষিরোদা সুন্দরী (স্বামী গয়ানাথ ভৌমিক), হরসুন্দরী (স্বামী নয়ন ভৌমিক), সুষমা রাণী ভৌমিক (স্বামী সুরেশ ভৌমিক), রেণু বালা ভৌমিক (স্বামী বৈকুণ্ঠ ভৌমিক), নিখিল ভৌমিক (পিতা আনন্দ ভৌমিক), গোবিন্দ চন্দ্র ভৌমিক, কীৰ্ত্তন আলী (পিতা আব্দুল খালেক) ও ইদুনী খাতুন (স্বামী মহর উদ্দিন)। [ছাদেকুর রহমান রতন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড