নগরবাড়ি প্রতিরোধযুদ্ধ (শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ)
নগরবাড়ি প্রতিরোধযুদ্ধ (শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১লা এপ্রিল, ৮ই এপ্রিল ও ৯ই এপ্রিল। এতে ৪ জন ইপিআর সদস্য শহীদ এবং কয়েকজন আহত হন। ৯ই এপ্রিল পাকসেনাদের তীব্র আক্রমণের মুখে প্রতিরোধযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন।
২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরু হওয়ায় সারাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হানাদার বাহিনী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনপদে ঢুকে হত্যা-লুট-ধর্ষণ চালাতে শুরু করে। এর ফলে সে-সময়ের অন্যতম মুক্তাঞ্চল শাহজাদপুরের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনীর সামনে আরিচা-নগরবাড়ি ফেরি পাড় হয়ে বাঘাবাড়ি দিয়ে শাহজাদপুরে ঢোকার একটি সহজ পথ ছিল। তাই এ এলাকার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল (চিথুলিয়া) শাহজাদপুরের ছাত্রনেতাদের প্রথমে নগরবাড়ির পথে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। ছাত্রনেতা ও অন্য মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে নগরবাড়ি থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বেরিকেড সৃষ্টি করেন।
রফিকুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে শাহজাদপুরের মুক্তিযোদ্ধারা নগরবাড়ি ঘাটে যান। তাঁর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও নেতৃবৃন্দের মধ্যে আব্দুর রহমান এমপিএ, আব্দুর রাজ্জাক মুকুল, হামিদ হোসেন রেজা খান, মামুন, ফকরুল ইসলাম, মো. আব্দুল হাই, হাসিবুর রহমান স্বপন (পাঠানপাড়া), আজাদ শাহ নেওয়াজ (পাঠানপাড়া), ওমর আলী, আ ন ম হাবিবুল হক হাবিব, এস এম রেজাউল করিম হেলাল, এস এম ফজলুল করিম দুলাল, আজাদ রহমান শাজাহান, নিয়ামুল ওয়াকিল খান আওরঙ্গ (দ্বারিয়াপুর)সহ অনেকে ছিলেন। আনুমানিক ১০০ ইপিআর ও আনসার সদস্যের সঙ্গে পাবনা, বেড়া, সাথিয়া, সুজানগর ও শাহজাদপুরের আরো ৩০০ ছাত্র- জনতা ২৮শে মার্চ নগরবাড়ি ঘাট এলাকায় যমুনা নদীর পশ্চিম তীর বরাবর অবস্থান নেয়। জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে এক রাতের মধ্যে প্রতিরোধ অবস্থানের সমস্ত বাঙ্কার খনন সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাঁদের জন্য খাবার আসতে থাকে। আস্তে-আস্তে মুক্তিযোদ্ধাদের জনবল বাড়তে শুরু করে। ২৯শে মার্চ তরুণ বাঙালি অফিসার ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার রশীদ খান পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের সম্ভাব্য খবর পেয়ে নগরবাড়ি ঘাট এলাকায় আসেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজীরহাট থেকে নগরবাড়ি ঘাট পর্যন্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। ১লা এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী ৩টি গানবোট ও কয়েকটি লঞ্চে করে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল বাধায় তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি আরো বৃদ্ধি পায়। ৮ই এপ্রিল বিকেলে নগরবাড়ি ঘাটে পাকিস্তানিরা বিমান আক্রমণ শুরু করে। ৯ই এপ্রিল প্রথম প্রহরে আর্টিলারির বোম্বিং আরম্ভ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে পাল্টা গুলি ছোড়েন। এ-সময় আর্টিলারির গোলায় ৪ জন ইপিআর সদস্য শহীদ এবং কয়েকজন আহত হন। অন্যদিকে গানবোট এবং লঞ্চযোগে আসা পাকিস্তানি পদাতিক সৈন্যরা নগরবাড়ি ঘাট থেকে ৬ কিমি দক্ষিণে নটাআলা ঘাটে নামে। এরপর নদী ও ভূমি উভয় অবস্থান থেকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের তীব্র আক্রমণের মুখে প্রতিরোধযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। [মাহফুজা হিলালী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড